বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩

তুরা (গারো পাহাড়) ; মেঘালয়

আবেশন

আসাম থেকে ১৯৭১ এ আলাদা হয়ে নতুন রাজ্য হয় মেঘালয়। এ রাজ্যের গারো হিল্স, খাসি হিল্স, জৈন্তা হিল্স এর মধ্যে গারো হিল্স এর অবস্থান মেঘালয় এর পশ্চিমে। এ রাজ্যের রাজধানী শিলং গারো হিল থেকে ৩১০ কিমি; ৮ ঘন্টার পথ, যা খাসি হিল এ অবস্থিত।  সাধারণত মেঘালয়ের ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন বলতে সৌখিন ট্যুরিস্টরা খাসি হিলকেই বুঝেন। আসলে মেঘালয় পুরোটাই অপেক্ষাকৃত দূর্গম আকর্ষণীয় একটি পাহাড়ি জনপদ। নানা ট্রাইবাল ননট্রাইবাল, উদ্ভিদ, প্রাণী মিলেমেশে এখানে সহাবস্থান করে। ঝর্ণা, পাহাড়ি পাথুরে নদীর ছড়াছড়ি সারা মেঘালয় জুড়েই। এর দক্ষিণে বাংলাদেশ এর ময়মনসিংহ সিলেট, পূর্ব  এবং উত্তরে আসাম, পশ্চিমে একাংশে বাংলাদেশ আরেক অংশে আসাম।





ময়মনসিংহ শহর থেকে নাকুগাঁও পর্যন্ত মোট ৭৬ কিমি পথ। বাস সি.এন.জি তে নালিতাবাড়ি পর্যন্ত  ৬৩ কিমি পথ গিয়ে অবশিষ্ঠ ১৩ কিমি পথ অটো রিক্সা, সি.এন.জি কিংবা ভাড়া মোটর বাইকে সহজেই পৌছে যাওয়া যায় নাকুগাঁ স্থলবন্দরে। এই বন্দরটি দিয়ে পাথর ভর্তি ট্রাক মেঘালয় আসাম থেকে আসা যাওয়া করে। বহু শ্রমিকের কর্মস্থল এই স্থলবন্দরটি।




এই বন্দরের বাংলাদেশ অংশের নাম নাকুগাঁও এবং ভারতীয় পোর্ট এর নাম ঢালু। ঢালু পোর্ট দিয়ে ভিসা করে নাকুগাঁঁও অংশে ইমিগ্রেশন, কাস্টম্স অফিসে ট্রাভেল ট্যাক্স ১১০০ টাকা দিয়ে,  এবং বিজিবি চেক এর পর ( ইমিগ্রেশন, কাস্টম্স এবং বিজিবি ৩ টি পয়েন্টেই নাম এন্ট্রি করবে) , ঢালু অংশে একই প্রসেস সারতে হবে। 



এই পোর্টে ভীর সবসময় ই অন্য পোর্ট এর থেকে কম হলেও উভয় পয়েন্ট এর কাজ সারতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। ঢালু অংশে ইমিগ্রেশন অফিস কাস্টমস অফিস থেকে ১ কিলোমিটার এর মতো দূরে।  না হেঁটে একটা অটো নিয়ে কাস্টমস এর কাজ শেষ করে ইমিগ্রেশন অফিস যাওয়াই ভালো। তবে এখানে কাস্টম্স অফিস থেকে ইমিগ্রেশন অফিস পর্যন্ত যাওয়ার সময় কোন বাহন না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। 

ঢালু ইমিগ্রেশন অফিস

বৈঠকখানার মতো একটা ঘরে এখানে ইমিগ্রেশন অফিস হেল্পফুল। দিনে ৩০-৪০ জন যাত্রী এ পথে আসা যাওয়া করে, সেকারণেই হয়তো ইমিগ্রেশন অফিস আধুনিকায়ন এর কোন পরিকল্পনা নেয়া হয় না। ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের জন্য এ পথে সেভেন সিস্টারের বিশেষ করে মেঘালয়, আসাম, অরুণাচল এমনকি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব অংশে (শিলিগুড়ি, কুচবিহার, সিকিম, দার্জিলিং) যাওয়া অপেক্ষাকৃত উত্তম সহজ পথ (ত্রিপুরা বাদে)।

মানি এক্সচেঞ্জ

এখানে বাংলাদেশ কিংবা ভারত কোন অংশেই মানি এক্সচেঞ্জ নেই। পোর্ট সংলগ্ন এলাকার বাংলাদেশ অংশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা টু রুপি একচেঞ্জ করা যায়। ঢালুতে গিয়ে করতে চাইলে বিরম্বনা হতে পারে, তাছাড়া রেটও কম পাওয়া যায়। ঢালু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বারেঙ্গাপাড়া বাজার ৪ কিমি পথ, সেখানেও করা যাবে। 




তবে হুন্ডি থেকে ময়মনসিংহ শহরে অপেক্ষাকৃত রেট বেশি থাকে। লিগ্যাল প্রসেস হিসাবে ডলার নিয়ে গেলে তবে তুরায় পৌছে কেবল ব্যাংক থেকে ডলার টু রুপি এক্সচেঞ্জ করা যাবে। এখানে বারেঙ্গাপাড়া কিংবা তুরা কিংবা ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে কোথাও মানি এক্সচেঞ্জ নেই। ডুয়েল কারেন্সি কার্ড দিয়ে বুথ থেকে এক্সচেঞ্জ করা যেতে পারে। অন্য পোর্ট এর মতো এখানে মানি হেন্ডলিং এর ব্যাপারটা আমার কাছে ততটা জটিল মনে হয় নি। রুপি নিয়ে গেলেও সমস্যা হয় না। তবে কি কি কারেন্সি আছে তা বিএসএফ জিজ্ঞেস করে এন্ট্রি করবে আসা এবং যাওয়া উভয় সময়েই। তবে যাই ই থাকুক কম করে বলাটাই বোধহয় উত্তম। 

 তুরা’র পথে

গারো বিশ্বাস মতে, পাওয়ারফুল গড ‘ডুরামা আম্বামা’র নাম অনুসারে এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ পাহাড় সারির নাম ‘ডুরা আগ্রি’ বা ডুরা হিল ডাকা হতো। ব্রিটিশরা পরবর্তীতে একে ‘তুরা’ নামে সম্বোধন করতো। বর্তমানে সকলেই একে ‘তুরা’ নামে ডেকে থাকে।

ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে থেকে ২০ রুপিতে অটোতে করে বারেঙ্গাপাড়া বাজার। সেখান থেকে তুরায় পৌছার একাধিক প্রকারের বাহন আছে- উইঞ্জার (বড় মাইক্রো বা হায়েজ জাতীয় ১৩ সিটের গাড়ি) যাার ভাড়া ১৫০ রুপি সময় লাগে ১ ঘন্টা ১০ মিনিট। অপরটি হচ্ছে বাস; ভাড়া ১৫০ রুপি, এছাড়া অটো সি.এন.জি জাতীয় গাড়িতেও যাওয়া যায়। আমি প্রথমবার বাস এবং দ্বিতীয়বার যাওয়ার সময় উইঞ্জারে গিয়েছিলাম। উইঞ্জার বেস্ট অপশন।

ঢালু থেকে গাড়ি যাওয়ার সময় শুধু উঠবে আর আসার সময় শুধু নামবে। বিকাল ৩:৩০ এ শেষ বাস। ঘন্টাখানেক পর পর বাস পাওয়া যায়। এই পথে যে পাহাড়টা দৃষ্টিসীমায় সব পাহাড়ের সবচেয়ে উপরে থাকে সেটিই ‘তুরা পিক’ নামে পরিচিত। 

তুরা পিক

যেতে যেতে তুরা পিক এর ঠিক চূড়ার কাছাকাছি তুরা বাজার বা তুরার গোটা শহর। বারেঙ্গাপাড়া থেকে ২-৩ কিমি এর সমতল পথ পাড়ি দিতেই পাহাড় বেয়ে বাস উঠে যাবে উপরের দিকে। পথে পড়বে ছোট ছোট আঞ্চলিক বাজার, স্কুল, মন্দির, ট্র্যাডিশনাল গারো বাড়ি ঘরের পিছনে পাহাড়ের ব্যাকড্রপ ইত্যাদি। তুরা বাসস্ট্যান্ড পাহাড়ের উপরে হলেও তুরা বাজার থেকে ডাউন হিল এ অবস্থিত। শহর এর সেন্ট্রাল পয়েন্ট তুরা বাজার। স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা একাই এসব বাসে যাতায়াত করে। নিরাপত্তাহীনতা এখানে অপরিচিত শব্দ বলেই মনে হয়েছে।

তুরা বাসস্ট্যান্ড

যাওয়ার পথে বাস তুরা বাজার বা সুপার মার্কেটকে বামপাশে রেখে যাত্রী নামিয়ে ডিসি হিল এ উঠে ডান দিকে নেমে যায় বাসস্ট্যান্ডে । কিন্তু আসার পথে তুরা বাজার থেকে ১০ রুপি ভাড়ায় অটোতে বাসস্ট্যান্ড এ এসে টিকিট নিয়ে বাসে উঠতে হয়। আর উইঞ্জার ঢালু থেকে আসামের কৃষ্ণা পর্যন্ত চলে। উইঞ্জার তুরা সুপার মার্কেট এর সামনে যাত্রী নামিয়ে আপার হিল ধরে রংরাম, আসানাং হয়ে সোজা চলে যায় কৃষ্ণা পর্যন্ত। কৃষ্ণা যেতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা ভাড়া ৪৫০ রুপি। উইঞ্জারে করে গুহাটি যাওয়া বাসের থেকে সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী। গুহাটিগামী বাস সকাল ৬ টায় এবং রাত আটটায় যা আমাদের জন্য ঝামেলাকর। ঢালু থেকে সরাসরি কৃষ্ণা, সেখান থেকে ১৫০ রুপিতে ২ ঘন্টায় গুহাটি। কৃষ্ণাতে ট্রেন স্টেশন আছে সেখান থেকে কেউ চাইলে অটোতে ৩০ রুপিতে স্টেশনে পৌছে ১ ঘন্টায় গুহাটি পৌছতে পারেন।

হোটেল

সুপার মার্কেটটি এভারেজ মানের একটি মার্কেট হলেও এখানকার প্রধান মার্কেট এবং কেন্দ্রস্থল। এর চারপাশে সব্জী বাজার। বর্তমানে ডাউন হিলে বাস স্ট্যান্ড এর দিকে ইন্ডিয়া বাজার নামে একটি আধুনিক সুপার শপ হয়েছে। তুরা সুপার মার্কেট এর চারপাশের রাস্তার ডান পাশের রাস্তার মোড়ে সানদারে হোটেল (এখানে ভাড়া ডাবল বেড নন এসি ২২৪০ রুপি সকালের নাস্তা মেন্ডেটরি, লাক্সারি ব্রেকফাস্ট ইনক্লডেট)। রেস্টুরেন্ট তৃতীয় তলায় এবং হোটেলে ক্রেডিট কার্ড একসেপ্টেবল, ওয়াই-ফাই এভেইলেভল।




 সুপার মার্কেট এর সামনের রাস্তার ডানের মোড়ে হোটেল রিকম্যান (নন এসি ডাবল বেড ভাড়া ২৮০০ রুপি)। দুইটি হোটেল এর মান ভালো। 

হোটেল রিকম্যান



বাম পাশের মোড়ে হোটেল প্যারামাউন্ট এটির মান ততটা ভালো নয়, রেট ১৫০০ টাকার মতো। এই হোটেল এর আন্ডারগ্রাউন্ডে আরো ৩টি ফ্লোর রয়েছে। 

হোটেল প্যারামাউন্ট


 বাংলাদেশীরা এখানে মোবাইল সীম পাবেন না। শহর থেকে ২ কিমি দূরে হোটেল পলো অর্কিড সবচেয়ে ভালো, খোলামেলা এবং ওয়াফাই সম্বলিত। সকালের মেন্ডেটরি নাস্তা সহ এই হোটেল এর ভাড়া ২৮০০-৩০০০ রুপি। ফ্যামিলি নিয়ে এটা বেস্ট। এটি হাওয়াখানা পার হয়ে কেন্দ্রস্থল সুপার মার্কেট থেকে প্রায় ২.৫ কিমি দূরে।

পলো অর্কিড

এছাড়া শহরে আর যে ৩ টি হোটেল আছে সেগুলোতে ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট এলাউ নয়। হোম স্টে আছে শহরের বাইরে ওগুলো ভালো ।

জনজীবন

শহরটি তুরা পাহাড়ের উপরে নিচে মিলিয়ে গড়ে উঠেছে। রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নানা নন ট্রাইবালদের মধ্যে রয়েছে বাঙালী, বিহারী, নেপালি সহ কম বেশি নানা জাতীসত্বার মানুষ। ট্রাইবালদের মধ্যে গারো, হাজং, খাসি ।


উপরে তুরা পিক


 বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সম্মিলন এখানে। সংখ্যাগত দিক থেকে সকল নন-ট্রাইবালদের সম্মিলিত পরিমাণ ট্রাইবালদের প্রায় সমানে সমান। তবে নন-ট্রাইবালরা এখানে রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত বলা যায়, নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে না। এ নিয়ে নন ট্রাইবালদের মধ্যে ক্ষোভ আছে এমন মনে হয়নি। নূন্যতম মুজুরি এখানে ১৫-২০ হাজার টাকার মধ্যে। যত্রতত্র প্রভাব চর্চা এখানে হয় না। মানুষ যথেষ্ঠ সুখী। যে সমস্ত বাঙালীদের সাথে কথা বলেছি তাদের প্রত্যেকের ই পূর্ব পুরুষ কোন না কোন সময় বাংলাদেশে ছিলেন বলে জেনেছি। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তার শিলং কিংবা অন্য প্রদেশেও গমণ করেন, তেমনি উচ্চতর চিকিৎসার জন্যও তারা অন্য রাজ্যমুখী হন। হিন্দি সকলেই বুঝেন, বিভিন্ন ভাষাভাষির সাথে হিন্দিতেই ভাব চালাচালি করেন। বাঙালী পাড়া, বাঙালী স্কুল, গুর্খা স্কুল রয়েছে। সিনেমা হল নেই। নাট্যশালা, গানের দল রয়েছে। বহিরাগতদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র আছে বলে সন্ধান পাই নি। তুরা বাজার এলাকা পুরাতন, মধ্য এবং উচ্চবিত্তরা আপার হিলে নতুন নতুন স্থাপনা করেছেন। ডন বস্কো সহ ট্রাইবাল স্কুল কলেজ আপার হিলেই অবস্থিত। তুরা টিভি স্টেশনও আপার হিলে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা শহরের কাছাকাছি ই অবস্থিত।

বিহারি

তুরা বাজারের আশপাশে বিহারিরা দৃশ্যমান। বিহারিরা বিহার থেকে বংশ পরম্পরায় এখানে মালামাল লোড-আনলোড এর কাজ করে থাকে। বিহারিদের পরিবার বিহারে থাকেন, পুরুষরা যারা আসেন তারা সাধারণত একসঙ্গেই অবস্থান করেন।

গারোদের পারিবারিক ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। পাহাড়ি এই দূর্গম অঞ্চলটির প্রগতিশীলতা পূর্বে দেখা ভারতের অন্য অঞ্চল থেকেও অনেক বেশি। নারী পুরষের কোন ভেদ বা ফারাক নেই। খাদ্য দ্রব্য এবং অন্যান্য বহু সুবিদার জন্য তাদের বহিরাজ্যের শরনাপন্ন হতে হয়। তাই বিভিন্ন পন্য এবং সুবিধার জন্য এখানে অন্য রাজ্য থেকে বেশি মূল্য গুনতে হয়; কোথাও দ্বিগুন এর ও বেশি। সে হোক খাদ্যদ্রব্য কিংবা হোটেল সার্ভিস কিংবা যানবাহন। 

শহর

তুরা বাজার

লাল হলুদ বিল্ডংটিই তুরা সুপার মার্কেট এর পশ্চাৎভাগ এবং এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে নীলাভ অংশটিই তুরার কাঁচা বাজার। এই রাস্তাটির উপরের মোড়টি সানদারে হোটেল এর মোড় লোকেরা একে সুন্দরী হোটেল বলে।  উঁকি দেয়া পাহাড়টিই তুরা পিক। চূড়ার খুব কাছাকাছি হলেও শহর থেকে তুরা পিক এ উঠতে ৩ ঘন্টা, নামতে তার অর্ধেক সময়।


সুপার মার্কেট এর সম্মুখভাগ

৩ তলা বিশিষ্ঠ  তুরা সুপার মার্কেটটি অন্য সুপার মার্কেটে প্রাপ্য পণ্যের প্রাচুর্য কিংবা পরিধিতে ছোট হলেও তুরাতে এটিই সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস। আকর্ষণীয় কিংবা বিশেষ পণ্যের মার্কেট না হলেও এখানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে মুদি, কনফেকশনারি কিংবা বেকারি পণ্য একপাশে অপর পাশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য। দু’তলায় খেলনা, ব্যাগ ইত্যাদি। তৃতীয় তলায় কাপড়। তবে বাংলাদেশীদের জন্য এসব এদেশ থেকে তুলনামূলক বেশি দাম ই বলা যায়। তবে কিছু কেনাকাটা করতে চাইলে এখান থেকেই করতে হবে।

তুরা সুপার মার্কেট (অভ্যন্তরভাগ)


সুপার মার্কেট সামনের ছোট রাস্তাটিতেই বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার বিভিন্ন সার্ভিস এর কাউন্টার, আর সামনে পিছনে সহ দু’পাশের ফুটপাতে সব্জী বা পাহাড়ি ফলমূল এর বাজার। পশ্চিম পাশে দুটো বাঙালী খাবার হোটেল আর সান্ধ্যকালীন স্ট্রিটফুড এর দোকান। রিকম্যান হোটেল এর সেকেন্ড ফ্লোরে ভিতরে একটি বাঙালী খাবার হোটেল রয়েছে।

এখান থেকে শিলং, শিলিগুড়ি, গুহাটি যাওয়ার বাস, সুমো জিপ, জাইলো নামে বড় মাইক্রোবাস সদৃশ একধরণের সার্ভিস চলাচল করে। অধিকাংশ সার্ভিস ই রাত ৮ টা থেকে। তবে সকালেও আছে। তুরা থেকে বাসে শিলং ৭-৮ ঘন্টা, গুহাটি ৬ ঘন্টা, শিলিগুড়ি ৮-১০ ঘন্টা সময় লাগে। ভাড়া ৬০০-৮০০ রুপির মধ্যে। শিলিগুড়ি রিজার্ভ জাইলো ১৫-১৭ হাজার টাকাঅ এছাড়া এখান থেকে হেলিকপ্টার সার্ভিস যোগে ৩০ মিনিটে শিলং গুহাটি পৌছা যায়। 


কাউন্টার 

সুপার মার্কেট এর ডানপাশের মোড় থেকে অপেক্ষাকৃত খাড়া উপরের দিকে পথটির অপর মাথায় ডিসি হিল। এই হিলে ডিসি অফিস অবস্থিত বলে একে ডিসি হিল বলে। এখানেই ব্যাংক কিংবা বুথ আছে। ছোট ডিসি পার্ক এখানেই অবস্থিত। বাসস্ট্যান্ড এর রাস্তায়ও এস.বি. আই এর  ব্যাংক ব্রাঞ্চ  আছে।


 ডি.সি হিল এবং বাবুপাড়া মোড় দিয়ে তুরা পিক এ উঠার পথ। কেউ তুরা পিক এ উঠতে চাইলে এখান দিয়ে উঠতে হবে। যাওয়া ৩ ঘন্টা এবং ফিরতে প্রায় ২ ঘন্টা।


শহর থেকে ৭-৮ কিমি বাইরে পাহাড়ের বুকে একটি নতুন বাসস্ট্যান্ড হয়েছে এটি আই.এস.বি.টি নামে পরিচিত। এখনও তেমন চালু হয়নি বাস স্ট্যান্ডটি তবে এই জায়গাটিও ভালোই।


দর্শনীয় স্থান

আসলে একটা জনপদের কিছু বিশেষ স্পট থাকলেও একজন ট্রাভেলার গোটা চিত্রটি, সবটা ক্যানভাস ই দেখেন।  গোটা মেঘালয়ের মধ্যে তুরার কথা যদি বলি এখানকার জীবন যাপন, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, বিভিন্ন জাতিসত্তার সহাবস্থান বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণের দাবী রাখে। এছাড়া পাহাড়ি জনপদ মানেই যেন একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। কোন একটি স্পট প্রকৃতপক্ষে একটি গন্তব্য হতে পারে, কিন্তু গন্তব্যে পৌছানোর পথ পরিক্রমাটিও কি একটি উপভোগ্য বা অর্জনযোগ্য সময় নয় ! এখানে অনেকগুলো ছোট বড় পাহাড়ি ঝর্ণা যেমন - পেলগা (শহর থেকে ১০ কিমি)। 

পেলগা দারে

পেলগা দারে

এই পথেই রংমেরাম ফলস ৭ কিমি। শহরেই গাঙরেকদারে নামে ছোট একটি ঝর্ণা রয়েছে। পেলগা যাওয়ার পথেই পরে পি.এ সাংমা স্টেডিয়াম। পেলগা যেতে হবে সি.এন.জি যোগে। ভাড়া আসা যাওয়া ৬০০-৭০০ রুপি।


চিবাগ্রি এখানকার একটি পিকনিক স্পট (আই.এস.বি.টি’র পথে) যা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত স্থানীয়দের কাছে এটি বিশেষ বিবেচিত হলেও এখানে যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তবে এই পথে পাথুরে নদী গানোল আকর্ষণীয়। আসলে মেঘালয়ের নদীগুলো যেহেতু পাহাড়ে তাই সবগুলোই পাথুরে নদী। রংরাম কিংবা আসানাং হয়ে কেউ যদি নকরেক কিংবা রংবেং যায় তাহলে পথে এই গানোল রিভার পড়ে।

গানোল রিভার



এছাড়া এখানকার সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্পট নকরেক ন্যাশনাল পার্ক। পার্কের একটি বিশেষ ভিউ পয়েন্ট স্পট দারিবক এ অবস্থিত। এটি নিয়ে আমি একটি আলাদা লেখা লিখব।


তুরা পিক
সি লেভেল থেকে প্রায় ৯০০ কিমি উচ্চতার এ পাহাড় চূড়াটি এখানকার ট্রাভেলারদের একটি আকাঙ্খিত জায়গা। নিচের ছবির যে পথটি উপরের দিকে সেটি তুরা পিক এ উঠার পথ, আর যেটি নিচের দিকে সেটি ডিসি পার্কের পথ।



এছাড়াও বাবুপাড়া দিয়ে তুরা পিক এ উঠার আরো একটি পথ রয়েছে -



এখান থেকেই তুরা পিক এর যাত্রা শুরু। পথে পড়বে ঘন জঙ্গল, ছোট বড় নানা বৃক্ষ, গুল্ম, নানাপ্রকারের জীব বৈচিত্র। ঝর্ণার শব্দের সাথে ভেসে আসবে বানর দলের উচ্চ স্বরের হাঁক ডাক। বেশ কিছুটা পথ পাথর বিছানো থাকলেও বেশিরভাগ অংশটুকুতে কেবল ঝূপ বেষ্ঠিত একটা ট্রেইল। ৩ ঘন্টা হাঁটলে পৌছা যাবে চূড়ায়। বর্ষায় এই পরিকল্পনা করা অনুচিত।

ট্রেইল



একেবারে চূড়ায় রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। এখান থেকে সমগ্র তুরা শহর এবং সমতল ভূমি দেখা যায়।


পিক এর মাঝপথ থেকে দেখা থেকে তুরা শহর


হাওয়াখানা
তুরা শহরটির একটি ওয়াইড ভিউ এই হাওয়াখানা থেকে পাওয়া যায়। আপার হিল, লোয়ার হিল, পাহাড় আর শহরের একটি বিস্তৃত মনোরম চিত্র দেখতে চাইলে এই হাওয়াখানা থেকে দেখতে হবে। এখান থেকে দেখলে তুরা শহরটিকে চমৎকার একটি শৈল শহর হিসাবে অনুধাবন করা যায়।



সমাপন

যারা সৌখিন ট্যুরিস্ট, গ্ল্যামার স্পট পছন্দ করেন তাদের এ জায়গা নিরাশ করতে পারে। তবে যারা ট্রাভেলার বিভিন্ন জাতিসত্বা কিংবা ভৌগলিক প্রকৃতি যাদের আগ্রহের বিষয় তারা একবার বেরিয়ে আসতে পারেন। কিংবা সেভেন সিস্টারে সংক্ষিপ্ত পথ হিসাবেও এ পথকে বেছে নেয়া যেতে পারে। 

দায়মুক্তি

এই লিখনের নানা তথ্য এবং ছবি লেখকের পর্যবেক্ষণকৃত। কেউ এর থেকে কোন তথ্য পেয়ে উপকৃত হলেও হতে পারেন। এর থেকে কোন তথ্য ছবি নিজের বলে চালিয়ে দিলেও লেখকের কোন আপত্তি থাকবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সোনাদিয়া : আ ডিজার্টেড আইল্যান্ড

 সময়কাল ২০২৪।  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর জনাকীর্ন তিনটি পয়েন্ট ডলফিন মোড় থেকে শুরু। প্রথমটি কলাতলী শেষেরটি লাবণী আর মাঝের পয়েন্টটির নাম সুগন্...