গঙ্গা নদীর
তীরে অবস্থিত অবিভক্ত ভারতের একসময়ের রাজধানী কলকাতা। প্রায় দু’হাজার বছরের প্রাচীন
জনপদ। বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, পেশার মানুষের লীলাভূমি এই কলকাতা শহর। পৌরসভাস্থ জনসংখ্যা
প্রায় ৫০ লাখ। আর গোটা কলকাতায় মানুষ বাস করে প্রায় দেড় কোটি। ৭৭.৬৮ শতাংশ হিন্দু
ধর্মাবলম্বী আর
২০.২৭ শতাংশ মুসলমান
ছাড়াও এখানে ক্ষ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, জরাথ্রুস্ট, ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষও বাস করে।
কলকাতার সাথে
রয়েছে বাংলাদেশের মানুষের নাড়ির বাঁধন। ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গ তে যা একবার কেটে গিয়ে জোড়া
লাগলেও ১৯৪৭ এর ভাঙনের পর তা আর জোড়া লাগেনি। বহু কলকাতাবাসীর পৈতৃক ভিটা বাংলাদেশে।
তাই কলকাতা বাংলাদেশী এবং কলকাতাবাসী উভয়ের জন্যই এক নষ্টালজিয়ার শহর।
![]() |
পার্ক স্ট্রিট |
মহানগরী কলকাতার
পরতে পরতে আর্ট। এক কথায় কলকাতা সিটি অব হ্যারিটেজ। ওখানকার বাড়ি-ঘর, দরজা-জানালা, চায়ের কাপ, খাবার প্লেট, রাস্তা-ঘাট,
বাস,ট্রাম, হলুদ ক্যাব সবকিছুতেই যেনো আর্টের ঐতিহ্যের ছড়াছড়ি। আপনি একজন আর্টের সমজদার
মানুষ হলে কলকাতা একবার ঘুরে আসলে তার ঘোর কেটে বের হওয়া আপনার জন্য মুশকিল। বার বার
আপনার কলকাতায় ছুটে যেতে ইচ্ছে করবে। আমার ব্যাক্তিগত উপলব্দি ছিলো নিদেনপক্ষে এমন একটা
নগরী না হলে কি আসলে চলে ! ওখানকার জীবন যাত্রা যথেষ্ট স্বতস্ফর্ত, যথেষ্ট স্বাধীন
মনে হয়েছে।
মধ্য কলকাতা
তার পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে মাথা উঁচু করে যেনো বেঁচে আছে। আমাদের মতো পুরনো ঐতিহ্যগুলোকে
ভেঙে তারা নতুন করেনি বরং নতুন শহর তারা উত্তর-পূর্ব দিকে প্রসারিত করেছে। মধ্য কলকাতায়
গেলে আপনার মনে হবে আপনি যেনো সেই বৃটিশ আমলের কোনো জনপদ দিয়ে হাঁটছেন। আমাদের কলকাতা
ট্যুর ১০ দিনের ছিলো। ১০ দিনে কলকাতা দর্শনের পিপসা দূর করার জন্য উপযুক্ত কোনো সময়
ই না। খুব টাইড শিডিওল আর দৌড় ঝাপ করে নগরীর ভেতর আর আশপাশের উল্লেখযোগ্য স্থাপনা আর
স্থান গুলো কোনো রকমে দেখেছিলাম। বহুদিনের সাধ ছিলো একবার বাঙালী হিন্দুধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজায় কলকাতায় থাকবো ২০১৭ তে সে সাধ পূরণ হয়েছিলো।
এটা এক দারুণ
সময়। এটা কলকাতার ফেস্টিবল টাইম। চতুর্দিকে আলোকসজ্জা, ঢাকের ধ্বনি, নানা ভঙ্গিমার
নানা উপাদানের তৈরি শৈল্পিক প্রতিমার স্থায়ি অস্থায়ী মন্ডপ, মন্ডপগুলোতে মানুষের ঠাসা
ভিড়, চারদিকে রঙের ছড়াছড়ি, ঝাঁ চকচকা এক নগরী। আমি বলবো কলকাতাকে দেখতে হলে আপনি এই
সময়েই দেখুন। কারণ অন্য সময়ের কলকাতা যে কোনো সময় পাওয়া যায়, কিন্তু কলকাতার এই রুপ
আপনি আর কক্ষনো দেখতে পাবেন না। অবশ্য এই সময়টাতে কলকাতায় পর্যটকদের চাপ একটি বেশি
থাকে বিধায় হোটেল সহ অন্যান্য খরচও একটু বেশি হয়।
কিভাবে যাবেন : পাসপোর্ট হয়ে গেলে ভিসায় আপনি ভারত
বাংলাদেশ স্থল বন্দরের ১৭ টি পোর্টের যেকোনো একটি উল্লেখ পূ্র্বক ভিসা করবেন। আগে কিছু
সীমাবদ্ধতা ছিলো যেমন- কেউ বাসের পোর্ট ব্যাবহার
করলে বাসে আর ট্রেনের পোর্ট ব্যাবহার করলে ট্রেনেই যেতে পারতো। একটা থাকলে আরেকটায়
যাওয়া যেতো না। উভয়টার সাথে বিমান পথ বাধ্যতামূলকভাবে থাকতো। সেক্ষেত্রে কলকাতা যাওয়ার
ক্ষেত্রে সকলেই বাসে যেতে চাইলে বেনাপোল-হরিদাসপুর আর ট্রেনে যেতে চাইলে দর্শনা-গেদে
ব্যাবহার করতো।
![]() |
গেদে (ভারতীয় অংশ) প্লাটফরম |
কিন্তু বর্তমানে এটি অনেক সহজ হয়ে গেছে, এখন এই দুইটি পোর্ট (বেনাপোল, দর্শনা ) অন্য ১৫
টির যে কোনো পোর্টের সাথে ফ্রি। আগে যে পোর্ট দিয়ে প্রবেশ করা হতো সেটি দিয়েই বের হতে
হতো। এখন আপনি যে পোর্ট দিয়েই প্রবেশ করুন না কেনো এই দুইটি পোর্ট এর যেটি দিয়ে ইচ্ছা
সেটি দিয়েই বের হতে পারবেন।
বাহন হিসাবে
ট্রেন আমাদের বরাবরই পছন্দ তালিকার শীর্ষে। আমরা যাওয়ার আগে কমলাপুর থেকে ট্রেনে যাওয়া,
আর ফেরত আসার উভয় টিকিটই কেটে নিয়েছিলাম।
![]() |
দর্শনা (বাংলাদেশ অংশ) প্লাটফরম |
চাইলে আপনি শুধু যাওয়ারটা কেটে নিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে আপনাকে পাসপোর্ট ভিসা সাথে নিয়ে কমলাপুর এর মৈত্রি ট্রেন এর কাউন্টার থেকে
টিকিট কাটতে হবে। একজন ৪ টা টিকিট কাটতে পারে, তবে সবগুলোর পাসপোর্ট ভিসা থাকা বাধ্যতামূলক।
২০১৭ তে ট্রেন এর টিকিট এর দাম ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্সসহ ছিলো ১৫০০ টাকা, বর্তমানে তা ট্রাভেল ট্যাক্সসহ ২৫০০
টাকা। উঠতে হয় ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে। আগে বাংলাদেশের সীমান্ত স্টেশন দর্শনা আর
ভারতের সীমান্ত স্টেশন গেদে উভয়টার দূরত্ব ২ মিনিটের হলেও উভয়টাতে নামতে হতো। গেদেতে
লাগেজসহ নেমে লাইন ধরে ইমিগ্রেশন ফেস করে ট্রেনে উঠতে প্রায় ২ ঘন্টা সময় লেগে যেতো। এছাড়াও কোনো লেকিংস না থাকলেও আপনাকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন অফিসে শ’দুয়েক টাকা ঘুষ হিসাবে দিতে হতো।
গেদে থেকে কলকাতা শহরের চিৎপুরে অবস্থি কলকাতা স্টেশনে পৌছতে আরও প্রায় ৩ ঘন্টা। কিন্তু এখন এটা অপেক্ষাকৃত সহজ
করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্টে ইমিগ্রেশন শেষে একেবারে কলকাতা গিয়ে পুনরায় ইমিগ্রেশন ফেস
করে স্টেশন থেকে বের হওয়া। মাঝখানের গেদের ঝামেলা উঠা নামা এখন আর নেই। তবে এখন হয়তো সময় আর ঘুষ গেদে তে না দিয়ে আপনাকে কলকাতা স্টেশনে দিতে হবে। আর ভাড়াটা
নিশ্চিত বাড়াবাড়ি।
কোথায় থাকবেন : কলকাতা স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়েই
ভাড়ায় ট্যাক্সি পাবেন। তবে সাবধান এরা ফরেনার বুঝে বেশি ভাড়া নিয়ে নেয়; আমরা এই খপ্পরে
পড়েছিলাম। ১০০-১৫০ রুপির ভাড়া ৪০০ রুপি নিয়েছিলো। পর্যটক হিসাবে কোথায় থাকা ভালো হবে
সে বিষয়ে কোনো ধারনা ছিলো না আমাদের। উঠেছিলাম মার্কুইজ স্ট্রিট এ ; ওটা মূলত বিহারীদের
এলাকা। বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ঘুরতে যাওয়া প্রচুর মানুষ মার্কুইস স্ট্রিট এ উঠে। পরবর্তীতে, ঘুরে ফিরে যা বুঝেছিলাম এবং সে মোতাবেক আমরা হোটেল বদলও করেছিলাম,
সেটা হচ্ছে কলকাতায় সবচেয়ে ভালো হয় মেট্রো স্টেশনের আশপাশে থাকলে।
আমরা উঠেছিলাম
সূর্যসেন স্ট্রিট এ। এটা কলেজ স্ট্রিট এর কাছেই ওখানকার ভাড়া একটু কম। আমার সবচেয়ে
উপযুক্ত মনে হয়েছে নিউ মার্কেট এলাকা। কারণ শহরের যে প্রান্তেই থাকুন না কেনো ঘুরে ফিরে প্রায়দিন ই আপনাকে ঐ নিউমার্কেট এলাকার আশপাশে যেতেই হবে। ওখানেও
ডাবল বেডের রুম ১০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এটাই মূলত কলকাতার সেন্ট্রাল পয়েন্ট কেনাকাটা
সবাই এখান থেকেই করে, এখানেই বিগবাজার সহ অন্যান্য মার্কেট আর এখানেই এসপ্লানেড, ধর্মতলা
মোড়। আপনি যেখানেই যেতে চান ধর্মতলা
মোড় হচ্ছে বেস্ট পয়েন্ট। এখান থেকে যেকোনো স্থানের বাস বা ট্রাম পাবেন। এছাড়াও রয়েছে এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশন। মেট্রো স্টেশনে ছবি তোলা নিষেধ; লুকিয়ে এই ছবিটা তুলেছিলাম।
![]() |
মেট্রো স্টেশন |
ট্রামে ৫
রুপিতে সারা শহর ঘুরে বেড়াতে পারবেন। মেট্রো ভাড়াও ৫ রুপি থেকে ১০ রুপি। আমরা অভ্যস্ত
না হওয়ার কারণে মেট্রো স্টেশন প্রথম তিনদিন খুঁজেই পাইনি অথচ স্টেশনের পাশ দিয়েই ঘুরা
ফেরা করেছি। ভূ-গর্ভস্থ স্টেশন, লাইন ধরে বিনা জ্যামে আপনি সহজেই পৌছে যেতে পারবেন
শহরের এ মাথা থেকে ও মাথায়। আর কলকাতার রাস্তা কিন্তু ঢাকার মতো নয়। এখানে প্রত্যেকটি
রাস্তা ওয়ান ওয়ে। যে রাস্তা দিয়ে আপনি যাবেন, ফিরবেন অন্য রাস্তায়। যে কারণে শহরে জ্যাম
নেই বললেই চলে।
কি কি দেখবেন : আগেই বলেছি কলকাতার পরতে পরতে আর্ট। যে দিক দিয়ে
আপনি হাঁটবেন ওখানেই কিছু না কিছু নতুন আপনার অভিজ্ঞতার ঝুঁলিতে আসবে। তবুও কিছু নির্দিষ্ট
স্থাপনা, মন্দির, মসজিদ, বাড়ি বিশেষে গুরুত্ব
দেয়ার দাবী রাখে। তন্মধ্যে শহরেই আছে ময়দান মেট্রো স্টেশনের কাছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল,
এম পি বিরলা তারা মন্ডল, বিবেকানন্দ উদ্যান, রেসকোর্স ময়দান, সেন্ট পল ক্যাথিড্রাল, প্রিন্সেপ ঘাট, মিলেনিয়াম
ঘাট, হাওড়া ব্রিজ, বিবেকানন্দ সেতু, টিপু সুলতান মসজিদ, নাখোদা মসজিদ, রবীন্দ্র সদন,
জোড়া সাঁকোর ঠাঁকুর বাড়ি, নেতাজি ভবন, কালিঘাট মন্দির, দক্ষিণেশ্বর মন্দির, ভেলুর মঠ ইত্যাদি। এছাড়াও শহর
এবং শহরতলীতে অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে। আর আপনি যদি দূর্গাপূজার সময়টাতে যান তাহলে
তো কথাই নেই, গোটা কলকাতাটাই পর্যটন স্পট হয়ে উঠে তখন।
প্রথম দিন : প্রথম দিনে আপনি ময়দানের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
দেখতে যেতে পারেন।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল |
নিউ মার্কেটে উঠলে পাশেই এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশন। সেখান থেকে ৫
টাকায় ময়দান স্টেশনে নামুন, কিংবা চাইলে নিউমার্কেটের পাশেই ধর্মতলার মোড়, সেখান থেকে
বাসেও যেতে পারেন। ময়দান স্টেশন থেকে বেরোলেই ময়দানের পাশেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।
এখানে ঘুরে ফিরে ভালো করে দেখতে আপনার দুপুর হয়ে যাবে। ফরেনারদের জন্য টিকিটের মূল্য
বেশি। যেহেতু আমাদের আর কলকাতাবাসীদের মধ্যে তেমন তফাৎ নেই সেক্ষেত্রে না বললে এরা
সাধারণত আলাদা করতে পারে না। এটি তাজমহলের আদলে শ্বেতপাথরে তৈরি মহারাণী ভিক্টোরিয়ার একটি স্মৃতি সৌধ। এখানে ব্রিটিশ সময়ের পেইন্টিং, অস্ত্র, ছবি, ব্যাবহৃত তৈজসপত্র ছাড়াও নান ধরণের জিনিসপত্র রয়েছে।
ওখান থেকে বেড়িয়ে বাইরে ছোটো ছোটো ভ্রাম্যমান অনেক দোকান
দেখতে পাবেন, এ সমস্ত দোকানে আমাদের এখানে পাওয়া যায় না এমন বহু নতুন নতুন খাবার দেখতে
পাবেন, চাইলে চেখে দেখতে পারেন। আমরা পাপড়ি চাট নামে একজাতীয় খাবার খেয়েছিলাম মন্দ
লাগেনি।
এছাড়াও ওখানে থাই পেয়ারা কেটে কাসুন্দি আর বিভিন্ন মসলায় মিক্সড করে বিক্রি
করে যা অত্যন্ত মজাদার, খেয়ে দেখতে পারেন।
ভিক্টোরিয়ার
পাশেই এম.পি. বিরলা তারা মন্ডল। মহাকাশ সম্পর্কীয় অভিজ্ঞতা নিতে এখানে ঢু মারতে পারেন।
![]() |
এম. পি. বিরলা প্লান্টেরিয়াম |
প্লান্টেরিয়ামের ডানপাশেই সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল। ওখান থেকে ঢুকে যান চার্চে।
সেন্ট পল ক্যাথেড্রাল |
প্রায় দু’শো বছর আগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা এই চার্চটি কলকাতার সর্ববৃহৎ চার্চ। এই দুটি দেখতে দেখতে দুপুর
গড়িয়ে যাবে।
এছাড়াও এখানে রয়েছে বিবেকানন্দ উদ্যান। সহস্র প্রজাতির নানা গাছে সমৃদ্ধ এই উদ্যান। উদ্যানে বিবেকানন্দের একটি স্ট্যাচুও রয়েছে।
বিবেকানন্দ এর স্ট্যাচু |
এই উদ্যান ধরে হাঁটলে সামনে বাংলাদেশের সন্তান ব্রীটিশ বিরোধী বিপ্লবী প্রীতিলতা সহ নানা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকারীর বিশাল বিশাল স্ট্যাচু দেখতে পাবেন। এপথ ধরে হাঁটলে সামনে পড়বে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম। এছাড়াও ধর্মতলার মোড় পর্যন্ত হেঁটে আসলে আরও সামনে পড়বে কার্ল মার্কস, এঙ্গেলস আর লেনিন এর আবক্ষ মূর্তি। এসব দেখে রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাওয়া। আমরা বিকালটা রুমে কাটিয়ে
প্রত্যেকদিন সন্ধ্যার পরে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে বেড়াতাম।
দ্বিতীয় দিন : ধর্মতলার মোড়ে বহু গম্বজের টিপু সুলতান
মসজিদ। টিপু সুলতান শাহি মসজিদ কলকাতার একটি বিখ্যাত মসজিদ। ১৮৪২ সালে টিপু সুলতানের কনিষ্ঠ পুত্র প্রিন্স গোলাম মহম্মদ এই মসজিদটি নির্মাণ করান। মসজিদের ভিতরের অংশটাও ঘুরে দেখুন।
সেখান থেকে অনতি দূরে রবীন্দ্র সরণীতে নাখোদা মসজিদ। এটি কলকাতার প্রধান মসজিদ ।
![]() |
নাখোদা মসজিদের অংশ বিশেষ |
এসপ্লানেড
মেট্রো স্টেশন থেকে ৫ রুপিতে মাহাত্মা গান্ধি রোড স্টেশনে নেমে ওখান থেকে বেড়িয়ে অল্প
হাঁটলেই নাখোদা মসজিদ। মোঘল সম্রাট আকবরের সমাধির আদলে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
আর সেখান থেকে কাছেই জোঁড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি। নাখোদা মসজিদ থেকে মাহাত্মা গান্ধি রোডের মোড় থেকে বাসে করে ৫ রপিতে জোঁড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়ি ঘুরে আসুন।
রবীঠাকুরের জন্ম এই বাড়িতেই,
এটি বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। এর সামনে শ্বেত পাথরের বিভিন্ন মোড়াল তৈরির অনেকগুলো দোকান রয়েছে।
তৃতীয় দিন : এই দিনে নাস্তা সেরে চলে যেতে পারেন হাওড়া ব্রিজে। ব্রিজের অপর পাশেই হাওড়া রেল স্টেশন সেটিও দেখে আসুন। একই পথে গঙ্গার ধারে মিলেনিয়াম পার্ক, প্রিন্সেপ ঘাট, বিবেকানন্দ সেতু, হাওড়া থেকে ফিরে দুপুরের পর অব্দি এখানে কাটিয়ে দিতে পারেন। চাইলে গঙ্গায় নৌকা ভ্রমণও করা যেতে পারে।
![]() |
হাওড়া ব্রিজ |
হাওড় ব্রিজ খিলানযুক্ত একটি ঝুলন্ত সেতু। হাওড়া
ব্রিজ এর উপর পুলিশ বক্স আছে, এখানে ছবি তোলা নিষেধ। তুললে পুলিশ থেকে
লুকিয়ে তুলতে হবে । পুলিশ দেখতে পেলে আপনাকে হেনস্তার এক শেষ হতে হবে। আমাদের সামনেই
এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি। সেতুর অপর পাশে হাওড়া রেল স্টেশন।
![]() |
হাওড়া স্টেশনের অভ্যন্তর ভাগের অংশ বিশেষ |
বিশাল
এক রেল স্টেশন হাওড়া। কলকাতা শহরে দুইটি বৃহৎ রেলস্টেশন রয়েছে একটি হাওড়া আর অপরটি
শিয়ালদহ। উভয়টি থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে রেল যোগাযোগ রয়েছে। হাওড়া স্টেশনের ভিতরেও ছবি তোলা নিষেধ।
চতুর্থ দিন : এই দিনে শহরের বাইরে দক্ষিণেশ্বর মন্দির
আর বেলুর মঠ দেখে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দক্ষিণেশ্বর এর টিকিট
কাটুন।
![]() |
শিয়ালদহ স্টেশন |
টিকিট কাটার পূর্বে স্টেশনের কাছের ছোট ছোট দোকান গুলো থেকে সেরে নিতে পারেন সকালের নাস্তা (পাতার তৈরি একপ্রকারের বাটিতে করে এই নাস্তাগুলো তারা সার্ভ করে )। কিছুক্ষণ পর পর ই দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার ট্রেন আছে। ভাড়া ১০ থেকে ১৫ রুপি। স্টেশনের বাইরে নাস্তার দোকানগুলোর সামনে থেকে কিংবা ভিতর থেকেও আপনি টিকিট কাটতে পারেন। ৪০ থেকে
৫০ মিনিটে আপনি দক্ষিণেশ্বর পৌছে যাবেন। এ পথে চলার সময় স্পিকার দিয়ে সঙ্গিত বাজিয়ে এক কিশোরকে অভিনব পদ্ধতিতে ভিক্ষা করতে দেখেছিলাম।
![]() |
দক্ষিণেশ্বর প্লাটফরম |
দক্ষিণেশ্বর স্টেশন সমতল থেকে উঁচুতে অবস্থিত। প্লাটফরমে
নেমে হাতের ডানপাশে লাইন পার হয়ে নিচে নেমে অটোরিক্সা পাবেন। অটোতে করে ১০ রুপিতে দক্ষিণেশ্বর
মন্দির।
![]() |
দক্ষিণেশ্বর মন্দির |
গঙ্গা নদীর
তীরে রাণী রাসমণি কতৃক নির্মিত কালী মন্দির এটি; হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র
স্থান। মূল মন্দির
ছাড়াও এখানে ছোট ছোট আরও বারোটি শিবমন্দির রয়েে।
মন্দির চত্বরের
উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে রামকৃষ্ণ এর বাসগৃহ। এখানে রামকৃষ্ণ পরমহংস থাকতেন। জুতা ব্যাগ রাখার আলাদা
কাউন্টারে জুতা ব্যাগ মোবাইল রেখে খালি পায়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। রক্ষানাবেক্ষণ বাবদ ১০
থেকে ২০ রুপি দিতে হয় ওখানে। লাইন ধরে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। মন্দিরের ভিতরে গঙ্গা
ঘাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র স্নান করে থাকেন।
দক্ষিণেশ্বর মন্দির এর পশ্চাৎভাগের গঙ্গা ঘাট |
দক্ষিণেশ্বর
মন্দির থেকে বেরিয়ে ডান পাশের একটি গেট দিয়ে গঙ্গার ফেরিঘাট, সেখান থেকে ফেরির টিকিট
কেটে গঙ্গার ঐ পাড়ে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পাশেই বেলুর মঠ।
![]() |
বেলুর মঠ |
পৌছতে লাগে ২০ মিনিট কিংবা বাসেও যেতে পারেন। দক্ষিণেশ্বর মন্দির আর বেলুর মঠের মাঝখানে বিবেকানন্দ সেতু।
![]() |
বিবেকানন্দ সেতু |
বেলুর মঠ স্বামী
বিবেকানন্দ কতৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান কার্যালয়। এই মন্দিরটি স্বামী বিবেকানন্দের পরিকল্পনায়
হিন্দু,ইসলাম,
বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান স্থাপত্যের মিশ্রণে নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন। এটি রামকৃষ্ণ পরমহংস, সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দের দেহাবশেষের উপর অবস্থিত। বেলুর মঠ
দেখে বাসে করে ১৫ মিনিটে চলে আসুন বালিঘাট রেলস্টেশন।
![]() |
বালিঘাট স্টেশন |
এই স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট
কেটে সিঁড়ি বেয়ে সমতল থেকে উপরে স্টেশন। সেখান থেকে ৪০ মিনিটে শিয়ালদহ চলে আসুন। তারপর বাসে করে হোটেল। কিংবা সরাসরি বেলুর মঠে থেকে কলকাতা শহরে আসার বাস পাবেন। ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যাবে। সন্ধ্যাটা শহরেই ঘুরাঘুরি অথবা সিনেমা দেখে কাটিয়ে দিতে পারেন। নিউমার্কেট আর ধর্মতলা মোড় মিলে এখানে বেশ কয়েকটি সিনেমা
হল রয়েছে। কিংবা বড় কোনো মন্ডপের সন্ধান জেনে ওখানটাও ঘুরে আসতে পারেন।
আমরা যেবার
গিয়েছিলাম তখন সবচেয়ে বড় মন্ডপ হয়েছিলো কলকাতার বেহালায়।
![]() |
বেহালার নির্বাচিত সবচেয়ে ব্যায়বহুল সৌন্দর্যময় মন্ডপের অংশবিশেষ (২০১৭) |
শীর্ষ স্থানীয় মন্ডপগুলোর এক একটি
কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে তৈরি করা হয়। এক একটি মন্ডপের প্রতিমা ছাড়াও গোটা মন্দিরটা বিভিন্ন থিমে সাজানো হয়।
![]() |
রাজস্থানী আদলে তৈরি বেহালার আরও একটি দূর্গা মন্ডপের অংশবিশেষ (২০১৭) |
প্রথিতযশা আর্টিস্টরা এসমস্ত মন্ডপে মাসের পর মাস শ্রমে এক একটা মন্ডপকে যে
বাহারী নান্দনিকতায় সাজিয়ে তুলেন তার সৌন্দর্য দেখলে আপনি অভিভূত হয়ে যাবেন।
![]() |
যান্ত্রিক সভ্যতার থিমে তৈরি বেহালার একটি মন্ডপের অংশ (২০১৭) |
চতুর্দিকে আলোক সজ্জা বাদ্য বাজনায় এক অভূতপূর্ব পরিবেশের জন্ম হয় তখন। প্রত্যেকটা
মন্ডপে থাকে প্রবেশের বিশাল লাইন।
![]() |
বেহালার আরও একটি মন্ডপের দেয়াল (২০১৭) |
কমপক্ষে ৩০ মিনিট লাইনে না দাঁড়িয়ে বলা চলে আপনি
বড় মন্ডপগুলোর কোনোটিতেই ঢুকতে পারবেন না। আসলে দূর্গাপূজার সময় পুরো কলকাতা যেনো জীবন্ত হয়ে উঠে।
পঞ্চম দিন
: পঞ্চম দিনটা ধর্মতলা মোড় থেকে (নিউমার্কেট উঠলে) ট্রামে চেপে কলেজ স্ট্রিট এর বইয়ের দোকান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,
ঐতিহাসিক কফি হাউস (সবগুলি কলেজ স্ট্রিটেই অবস্থিত) ইত্যাদিতে ঘুরে ফিরে আড্ডাবাজি
করে কাটিয়ে দিতে পারেন।
![]() |
ট্রাম |
কলকাতার ট্রামে বসলে আপনার এমন উপলব্দি হবে- যেনো একটা টাইম ট্রাভেল
কার পুরনো থেকে আরো পুরনোতে নিয়ে যাচ্ছে আপনাকে। ট্রামের ঘন্টি, টিকিট, টিকিট কালেক্টরের
পোষাক, পয়সা রাখার বাক্স সব কিছুতেই যেনো পুরনো ঐতিহ্য ঝেকে বসে আছে আজও। যেখানেই যেতে চান শহরের এ মাথা
থেকে ওমাথা যতদূর অব্দি ট্রাম চলে, ৫ রুপি হলেই হলো।
![]() |
কফি হাউসের বহির্ভাগ |
কলেজ স্ট্রিটেই কফি হাউস। নামে কফি হাউস হলেও এখানে নানা ধরণের খাবার পাওয়া যায়। নিশ্চয় এখানে গেলে পর্যটকরা অন্তত এক কাপ কফি না খেয়ে ফিরে না। তবে কফি ছাড়াও এখানে আপনি বিভিন্ন প্রকার খাবারের তালিকা পাবেন।
![]() |
কফি হাউসের মেনু |
সেখান থেকে ইচ্ছেমত অর্ডার করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার কাঙ্খিত খাবার আপনার সামনে নিয়ে আসবে সাদা রঙের বিশেষ পোশাক আর পাগড়ি পরিহিত বেয়ারা।
![]() |
কফি হাউসের ভিতরের অংশ বিশেষ |
ঐতিহ্যবাহী
হলেও কফি হাউসের কফি আর বিরিয়ানী আমাদের বিশেষ
কিছু মনে হয় নি। কেবল নামের উপরে সারাদিন উপচে থাকে কফি হাউস।
![]() |
কফি হাউসের দেয়ালে পোষ্টার |
রাজনীতি, সাহিত্য, শিল্পের আড্ডার সূতিকাগার কফি হাউসের দেয়াল জুড়ে নানা শিল্পীর আঁকা বিভিন্ন ছবি আর রাজনৈতিক শ্লোগানে ঢাকা। আমরা সূর্যসেন স্ট্রিট এ উঠেছিলাম, কলেজ স্ট্রিট এর পাশেই। ওখানে উঠলে আলাদা করে আর কলেজ স্ট্রিট যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। এছাড়া কলেজ স্ট্রিট এ কলকাতার বিভিন্ন বইয়ের প্রকাশনার অফিস। সেগুলো থেকে পছন্দমত বই ও কিনে নিতে পারবেন।
বিখ্যাত শাড়ি কাপড়ের দোকান ‘আদি ঢাকেশ্বরি’ ‘ আদি মোহিনি মোহন কাঞ্জিলাল’ এর শো-রোম ও কলেজ স্ট্রিট এ ই অবস্থিত। এখান খুব সস্তায় বিভিন্ন ধরণের শাড়ি কিনতে পাওয়া যায়।
ষষ্ঠ দিন
: এই দিন আপনি নেতাজি ভবন আর কালিঘাট মন্দির থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এসপ্লানেড মেট্রো স্টেশন
থেকে নেতাজি ভবন স্টেশনে নেমে অল্প কিছুদূর ডানদিকের রাস্তায় হাঁটলেই নেতাজি ভবন। এক্ষেত্রে
নেতাজি ভবনটা কোন দিকে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে।
![]() |
নেতাজি ভবন |
নেতাজি সুভাস
চন্দ্র বোস ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এর দুইবারের সভাপতি। ব্রিটিশদের
থেকে ভারতে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিনি সশস্র পন্থাকেই সঠিক মনে করতেন, যেখানে গান্ধি
ছিলেন অহিংস মতবাদে বিশ্বাসী। গান্ধীর সাথে মতের দ্বন্ধের কারণে তিনি কংগ্রেস থেকে
পদত্যাগ করে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং বিভিন্ন দেশের সহায়তায় ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের আন্দোলন শুরু করেন। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ আজ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায় নি। কারো মতে নেতাজী রাশিয়ার কাছে বন্দী অবস্থায়, সাইবেরিয়াতে
মৃত্যুবরণ করেন। আর কারো মতে, আসলে ভারতবর্ষে
নেতাজির তুমুল জনপ্রিয়তায় ঈর্স্বান্বিত হয়ে একদল উঁচুতলার ভারতীয় নেতা
এবং ইংরেজ সরকার মিলিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে নেতাজীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে
দেয়। বর্তমানে রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির
চিতাভষ্ম পরীক্ষা করে জানা গেছে ঐ চিতাভস্ম নেতাজির নয়। নেতাজির এই বাড়িটি এখন জাদুঘর হিসাবে ব্যাবহৃত হচ্ছে।
নেতাজি ভবন দেখে নেতাজি ভবন মেট্রো স্টেশন থেকে মেট্রো করে চলে যান কালিঘাট স্টেশনে। সেখানেই স্টেশনের পাশেই কালিঘাট মন্দির।
![]() |
কালীঘাট মন্দির |
পৌরাণিক কিংবদন্তি অনুসারে, সতীর
দেহত্যাগের পর তাঁর ডান পায়ের চারটি (মতান্তরে একটি) আঙুল এই তীর্থে পতিত
হয়েছিল। কালীঘাট একটি বহু প্রাচীন কালীক্ষেত্র। কোনো কোনো গবেষক মনে
করেন, "কালীক্ষেত্র" বা "কালীঘাট" কথাটি থেকে "কলকাতা" নামটির উদ্ভব। কালীঘাট এর পরিবেশ আমার কাছে অত্যন্ত বাজে মনে হয়েছে। এখানে গেটের কাছে যেতেই একাধিক দল লেগে যাবে আপনার পিছনে জুতা তার কাছে রেখে প্রসাদ তার থেকে কিনে মন্দিরে প্রবেশ করানোর জন্য। শর্ট কাটে অল্প সময়ে মায়ের দর্শন পাইয়ে দেবে দু’শো টাকার বিনিময়ে, অন্যথায় ঘন্টখানেক লাগবে; এসব বলবে। সাবধান এসবে কান দিবেন না। লাইন ধরে কালী মূর্তির কাছে যেতে আপনার বড়জোড় ৮ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগবে। তাছাড়া লাইনে দাঁড়িয়ে আর সবার সাথে যাওয়ার একটা আনন্দও আছে। পূজারিরা ফুল ফল আর বিভিন্ন প্রসাদের প্লেট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। ভিতরেও একজন আপনার থেকে টাকা চাইবে, পর্যটক হিসাবে ওসব দেয়ার আপনার কোনো প্রয়োজন নেই।
সপ্তম দিন : সপ্তম দিনে সাইন্স সিটি থেকে ঘুরে এসে সন্ধ্যাটা কোনো কেনাকাটা থাকলে সেরে নিতে পারেন। কলকাতার প্রায় প্রতিটি সিনেমা হলে লাইভ বার আছে, চাইলে সেখানেও কাটিয়ে আসতে পারেন সন্ধ্যাটা।
অষ্টম দিন : সিনেমার প্রতি আকর্ষন থাকলে টালিপাড়া ঘুরে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে এসপ্লানেড থেকে মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশনের টিকিট কাটতে হবে। মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশন উত্তম কুমারের ছবি দিয়ে মোড়ানো। বাইরে বেরোলেই উত্তম কুমারের স্ট্যাচু।
![]() |
টালিগঞ্জ |
অল্প পরে কিশোর কুমারের মূর্তি এখানে চলচ্চিত্র কিংবা সিরিয়ালের শ্যুটিং এর জন্য রয়েছে ইন্দ্রপুরী, টেকনিশিয়ান সহ বেশ কয়েকটি নতুন পুরাতন ষ্টুডিও।
![]() |
টেকনিশিয়ান ষ্টুডিও |
এই পথ দিয়েই এক সময় হেঁটেছেন সত্যজিত রায়, ঋত্বিক ঘটক, উত্তম কুমার, কিশোর কুমার এখনও হাঁটেন বহু প্রতিভাবান শিল্পী। টালিপাড়ার এই রাস্তাগুলোতে হাঁটলে এই অনুভূতি আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। এছাড়াও মহানায়ক উত্তম কুমার এর পূর্বের স্টেশন রবীন্দ্র সদন এ নেমে পশ্চিমবঙ্গের সরকারী এবং অন্যতম চলচ্চিত্র কেন্দ্র নন্দন এ ঘুরে আসতে পারেন। এর নামাঙ্কন এবং গেট উন্মুক্ত করেছিলেন সত্যজিৎ রায়।
নন্দন চলচ্চিত্র কেন্দ্রে উৎকৃষ্ট মানের চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি
চলচ্চিত্র বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পাঠ্যক্রম ও কর্মশালার
আয়োজন করা হয়। নন্দনে একটি গ্রন্থাগারও রয়েছে, যেখানে চলচ্চিত্র বিষয়ক
সাম্প্রতিকতম প্রকাশনাগুলিও পাওয়া যায়। মূলধারার উৎকৃষ্ট বাণিজ্যিক ছবিও এই প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত
হয়ে থাকে।
পরের দিন বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি। আসার পথের মতো এবারও ঘুষ বাবদ শ’দুয়েক টাকা বরাদ্ধ রাখতে হবে। কেনাকাটা বাদে ১০ দিনের কলকাতা ভ্রমণে আপনার ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
সাবধানতা : অাপনি অবশ্যই ডলার এক্সচেঞ্জ করে রিসিভ কাগজটা নিয়ে
নেবেন, আর কেনাকাটা করার পর যে রিসিভ ফর্দগুলো আপনাকে দেয়া হবে তা ও,
অন্যথায় এসব নিয়ে আপনাকে ফেরার পথে হেনস্থার শিকার হওয়া লাগতে
পারে।
বি:দ্র: - ব্লগে ব্যাবহৃত সর্বশেষ ছবিটি ছাড়া বাকী সব ছবি লেখকের নিজের তোলা। কতক মোবাইল ক্যামেরা আর
কতক ডিজিটাল সিঙ্গেল রিফ্লেক্স ক্যামেরায় তোলা। এই সব ছবি কিংবা লিখা বিনা
অনুমতিতে কেহ নিজের বলে চালিয়ে দিলেও লেখকের কোনো আপত্তি নাই। ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন