বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০

এ জার্নি ইন সার্কেল হিলি ওয়ে - চট্টগ্রাম টু বান্দরবান টু থানচি টু আলিকদম টু চট্টগ্রাম।


                                ব্যক্তিগত অবস্থান জনিত কারণে এবারও আমাদের যাত্রা শুরু ময়মনসিংহ থেকে। আমাকে সহ ট্রাভেলার ছিলাম আমরা মোট ৪ জন। ৪ দিনের ট্যুর প্লেন, কিন্তু কাঙ্খিত স্পট অনেক তাই অন্যান্য ভ্রমণ পরিকল্পনার মতো এবারেও আমার ব্যক্তিগতভাবে আকাঙ্খা ছিলো একটা কংক্রিট প্ল্যান এবং তা পুঙ্খানুপুঙ্খু বাস্তবায়নের জন্য রাতের ঘুমানোর সময় বাদে বাকী সময়ের যথাযথ ব্যবহার, প্রতিটা মুহুর্তকে গুরুত্ব দেয়া। আমাদের কোন গাইড নেই, এই সমস্ত জায়গাগুলোতে যাওয়ার পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই ( বান্দরবান শহর কিংবা কেওক্রাডং যাওয়া হলেও এই স্থানগুলোতে কখনও যাওয়া হয়নি)। ঘুরার আনন্দের সাথে গাইড হীন ঘুরার চ্যালেঞ্জ সব সময় পাওয়ার ক্ষেত্রে এক বাড়তি প্রাপ্তি যোগ করে। আমি এই বিষয়টিকে অত্যন্ত উপভোগ করি এবং পরিকল্পনা মাফিক পরবর্তীতে বাস্তবে তা প্রায়াংশে মিলে গেলে তৃপ্তিবোধ কাজ করে।  পরিকল্পনায় সম্ভাব্য বাজেট ধরেছিলাম কেনাকাটা বাদে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বলা চলে প্রায় প্রতিটি বিষয় ই শেষ পর্যন্ত আমরা পরিকল্পনা মাফিক ই বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। 

 

সার্কেল রোড ম্যাপ

 

হেমন্তই এই অঞ্চলগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। ময়মনসিংহ রেল স্টেশন থেকে বিজয় এক্সপ্রেস যোগে আমাদের যাত্রা শুরু রাত ৮:৩০ মিনিটে, ভাড়া ৩৩০ শোভন, শোভন চেয়ার ৩৮০, অনলাইনে কাটলে বাড়তি চার্জ যুক্ত হবে। এছাড়াও এই ট্রেনে এসি নন এসি কেবিনও আছে। ভৈরব পর্যন্ত অন্ যকোন গাড়ি না থাকায় কোন ক্রসিং এ পড়েনা। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামি কয়েকটি গাড়ির ক্রসিং হয়, তবে সুখের বিষয় দুই লেনের কাজ প্রায় শেষ, যা শেষ হতে বড়জোর বছর খানেক। একলেন হওয়া সত্বেও এই গাড়ির পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টায় ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রাম পৌছানো সম্ভব। ভোর ৫ টায় বিজয় এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌছে। 

স্টেশন থেকে বেরিয়ে বান্দরবানগামী বাসের জন্য আপনাকে যেতে হবে বদ্দারহাঁট বাসস্টেশনে। এক্ষেত্রে স্টেশনের বাইরে বেড়িয়ে হাতের ডানদিকে ভোরের রাস্তায় দু তিন মিনিটের পথ হেঁটে মার্কেট মোড়ে গিয়ে সেখান থেকে পিকাপ বা বাসে উঠবেন। স্টেশনের বাইরে পিকাপ আপনাকে চৌরাস্তা মোড় অর্থ্যাৎ কর্ণফুলি ব্রীজ এর মোড় থেকে বাস পাবেন বলে সেখানে নিয়ে যেতে চাইতে পারে, এটা করবেন না, কারণ সেখানে গেলে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোর সিট ফাঁকা থাকা না থাকার চক্করে পড়ে আপনার দেরি হয়ে যাবে অনেকটা। ভাড়া ১০ টাকা কিংবা সিনএজি রিজার্ভে গেলে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা নেবে।

পূরবী আর পূর্বানি নামে দুইটি সার্ভিস বান্দরবানের রুটের প্রধান সার্ভিস। বান্দরবানে ট্যুরিস্ট প্রচুর বলে সকাল বেলায় খুব দ্রুত একটার পর একটা গাড়ির সিট বুকিং হয়ে যায়। স্টেশন থেকে বান্দরবানের দূরত্ব ৭৬ কিমি, ভাড়া নন এসি ১২০ এসি ১৮০। সরু ২ লেনের রাস্তার কারণে সময় লাগে ২.৩০ ঘন্টা। কোন সময় ব্যয় না করে আগে বাসের টিকিট কাঁটবেন, টিকিট হাতে নিয়ে কাউন্টারে বাস ছাড়ার সময় জিজ্ঞেস করে কাউন্টারের সাথেই স্টেশনেই হোটেল আছে সেগুলোর একটিতে নাস্তার কাজ সেরে নিতে পারেন অথবা বান্দরবানে পৌছেও নাস্তা করতে পারেন। সাধারণত ৩০ মিনিট পর পর গাড়ি ছাড়ে, তবে সিট বুকিং হয়ে গেলে আগের গাড়ির স্টেশন ত্যাগ সাপেক্ষে পরের গাড়িও ছেড়ে দেয়। তবে গাড়ি ছাড়ার সময় কোন যাত্রী অনুপস্থিত থাকলে তাদেরকে হোটেলগুলোতেও খুঁজ করতে দেখেছি। অতটা দু:শ্চিন্তার বোধহয় প্রয়োজন নেই।

বান্দরবান বাসস্টেশন পৌছার প্রায় ১০ কিলোমিটার মতো আগে থেকেই পাহাড়ি উঁচু নিচু ধরে গাড়ির চলা শুরু হয়। কাজেই বলা চলে আপনার চতুর্পাশ এর সৌন্দর্য উপভোগ এখান থেকেই শুরু। বান্দরবান থেকে থানচি হয়ে আলিকদম এই রাস্তাটা আসলে একটা সার্কেল রোড। আপনি থানচি গিয়ে নাফাখুম, আমিয়াখুম, দেবতাখুম মুখিও যেতে পারেন আবার আলীকদম অভিমুখেও যেতে পারেন। কিংবা চাইলে নাফাখুম, আমিয়াখুম, দেবতাখুম থেকে থানচিতে ফিরে বান্দরবানের দিকে সরাসরি না এসে আলীকদম হয়েও চট্টগ্রাম ফিরতে পারেন। সেক্ষেত্রে পুনরায় আপনাকে বান্দরবান হয়ে চট্টগ্রাম আসতে হবেনা। আলীকদম থেকেই চকরিয়া হয়ে চট্টগ্রাম ফিরতে পারবেন এবং আসলে আলীকদম হয়ে চট্টগ্রাম ফেরাটাকেই আমি বেস্ট মনে করি। কারণ যেহেতু ঘুরতে বেরিয়েছেন রাস্তা রিপিট না করে অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরলে আরো দেখার পরিধিটা বাড়ে। আলীকদম হয়ে ফিরলেও সকালে রওয়ানা দিয়ে আলীর গুহা দেখে সন্ধ্যার মধ্যেই চট্টগ্রাম ফেরা সম্ভব। আমরা সেটিই করেছিলাম। আর শুধু তো আলীর গুহা নয়, থানচি থেকে আলীকদম এর যে পাহাড়ি পথটি সেটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পথ এবং সৌন্দর্যের দিক থেকেও খাঁসা। সারাটা পথ যেমন আপনাকে মুগ্ধতা আচ্ছন্ন করে রাখবে, তেমনি পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠতে উঠতে একটা মৃদু ভয়মিশ্রিত পুলক অনুভূতি যাকে বলে রোমঞ্চকর অনুভূতি তা ও কাজ করবে, যদিও ভয়ের কোন কারণ নেই।

এ যাত্রায় আমাদের পথ বান্দরবান থেকে থানচি, থানচি থেকে আলীকদম ( নাফাখুম নয়, নাফাখুম এর পথ থানচি থেকে আলাদা হয়ে গেছে ), আলীকদম থেকে চকোরিয়া হয়ে চট্টগ্রাম। বান্দরবান থেকে থানচির দূরত্ব ৭৩ কিমি, থানচি থেকে আলীকদম ৩৪ কিমি (১ ঘন্টা ১৫ মিনিট), আলীকদম থেকে চকরিয়া ৪৩ কি.মি. ( ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট) চকরিয়া থেকে চট্টগ্রাম ৯৭ কি.মি. (৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট)।

বান্দরবান : আশা করা যায় কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটলে আপনি নয়টার মধ্যে বান্দরবান বাস স্টেশনে থাকবেন। ততক্ষণে একটা মৃদু মুগ্ধতায় আপনি আচ্ছন্ন।

 

বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড ( ছবি: সংগৃহিত )

 প্রথম দিনটা আমার পরামর্শ থাকবে বান্দরবানেই থেকে যান। বাসস্টপ থেকেই নানা হোটেলের সাইনবোর্ড চোখে পড়বে। অল্প দূরেই ডিসি অফিস সেখানে নানা দামের থাকার হোটেল আছে, বাসস্টপ থেকে অটোতে ১০ টাকা ভাড়া সেখানে থাকতে পারেন, আমরা চারজনের ২ বেড এর রুম সিজনেই ১২০০ টাকায় নিয়েছিলাম। এছাড়াও যেখান থেকে থানচিগামি বাস ছাড়ে সেই বাসস্টেশনেও হোটেল আছে, ওখানেও থাকতে পারেন। ওখানে আরও কম।

আপনার হাতে সারাদিন। বান্দরবান শহরে ঘুরার মতো বেশ কিছু পর্যটন স্পট রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্পট নৗলাচল, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির। এই তিনটি স্পট ঘুরতেই আপনার দিন কেঁটে যাবে। হোটেলে রুম নিয়ে সারারাতে জার্নির পরে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে নামতে হয়তো বেলা ১১ টা। প্রথমে স্বর্ণ মন্দির যাওয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। আমরাও তাই করেছিলাম।

স্বর্ণমন্দির : আমরা ডিসি অফিসের গেটের ঠিক বিপরিতে যে রাস্তার পাশের হোটেলটিতে উঠেছিলাম সেই রাস্তাতে দাঁড়ালে পাশেই যে বড় ব্রিজটি দেখা যায় সেটি সাঙ্গু ব্রিজ। এই ব্রিজ এর পাশ থেকেই ২০ টাকায় জনপ্রতি অটোতে সোজা চলে যেতে পারবেন পাহাড়ের উপরে স্থাপিত স্বর্ণ মন্দির নামক বৌদ্ধ প্যাগোডাটিতে, যা যথেষ্ঠ সৌন্দর্যমন্ডিত একটি স্থাপনা। 

 

উপরে স্বর্ণ মন্দির

বেশ কিছু সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে আপনি যখন প্যাগোডা চত্বরে পৌছবেন তখন সোনালী রঙের স্থাপনাটির নানা কারুকাজের সোনালী আলোর দ্যুতির প্রতিফলনে আলোকিত হয়ে উঠবে আপনার চক্ষু মন। 

 

স্বর্ণমন্দির এর সিঁড়ি পথ

 

ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধমূর্তি, ড্রাগনঘন্টা সহ নানা স্থাপত্য অলংকারে অলঙ্কৃত চারপাশ। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা চিবর পরিহিত অবস্থায় নানা কাজে ব্যস্ত। পাহাড়ের উপরের মন্দিরটি থেকে নিচে চারপাশে তাকালে কোথাও দৃষ্টি আঁটকে না। 

 


মন্দিরটি থেকে নেমে আসতে আসতে হয়তো দুপুর ১ টা। পরবর্তী দুইটি স্পট নির্ঝঞ্জাট ঘুরে বেড়ানোর জন্য দুপুরের খাবার একটি তাড়াতাড়ি সেড়ে নেওয়াই উত্তম। মন্দির থেকে অটোতে করে সোজা চলে আসলাম বাসস্টপে। সেখানে খাবার হোটেল থেকে খেয়ে প্রথমেই মেঘলা তারপর নীলাচল। খাওয়া শেষ হতে দুপুর ২টা। আমরা যে হোটেলটিতে খেয়েছিলাম তার খাবার ছিলো অত্যন্ত সুস্বাদু।

মেঘলা : এই স্পটটি চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়ার পথে হাতের বামপাশে পড়ে। বাসস্টেশন থেকে দূরত্ব প্রায় ৪ কি.মি। সি.এন.জি কিংবা চট্টগ্র্র্র্র্রামগামী বাসে এখানে যাওয়া যায়। সি.এন.জি তে ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা, বাসে জন প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। আমরা বাসে করে গিয়েছিলাম। মেঘলা‘র প্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্রবেশের টিকিট মূল্য ৬০ টাকা। 

 

মেঘলা’র ম্যাপ

এই স্পটটির প্রবেশ মুখেই দুটো পথ পড়ে। একটি সোজা নেমে গেছে নিচের দিকে ঝুলন্ত সেঁতুতে আরেকটি হাতের ডানপাশে খাঁড়া সিঁড়ি সমৃদ্ধ। যে রাস্তাটি সোজা নেমে গেছে ঐটি পিচঢালাই সমান্তরাল রাস্তা (এটি দিয়ে যাওয়াই উত্তম)। এই রাস্তাটি ধরে নামলেই ডানপাশে পড়ে পাহাড়ি টিলার মধ্যস্থ লেক আর লেকের উপরে ঝুলন্ত সেতু। 

 

ঝুলন্ত সেতু (মেঘলা)

সেতুটি পার হয়ে ওপারে গেলেই মিনি কেবলকার ( আমার কাছে নামকাওয়াস্তে কেবলকার)। গেটের বাইরেই প্রবেশ টিকিটের সাথে এই কেবলকার এর টিকিট কিনতে পাওয়া যায়। চড়তে চাইলে ওখান থেকেই কেটে নিতে পারেন। টিকিটের মূল্য ৬০ টাকা। কেবলকার থেকে নেমে উপরের দিকের রাস্তাটি ধরে উপরে উঠে গেলেই পাবেন আদিবাসীদের বেশ কয়েকটি দোকান। 

 

উপরের দোকান (মেঘলা)

আরো মিনিট খানেক হাঁটলে আরো কয়েকটি দোকান। এগুলোতে নানা জিনিসের সাথে ডাব বিক্রি হয়, নারকেল সমেত ডাব খেতে খেতে ওখানকার বসার জায়গাগুলোতে বসে জিরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আড্ডা দিয়ে কাঁটিয়ে দিতে পারেন কিছুটা সময়। ওখান থেকে নিচের দিকে যে একটিমাত্র সিঁড়ি সমেত রাস্তা ওদিক দিয়ে নামলে মাঝপথেই পাবেন মিনি চিড়িয়াখানা বানর, ভল্লুক সহ বেশ কয়েক প্রজাতির প্রাণী ওখানে রাখা আছে। চিড়িয়াখানা দেখে আরেকটু নামলেই দ্বিতীয় ঝুলন্ত সেতুটি বেয়ে যে রাস্তাটি ঢুকার সময় হাতের ডান পাশে পড়েছিলো ওটি বেয়ে কিংবা পূর্বের নামার রাস্তাটি ধরেই উপরে উঠে আসতে পারেন। হ্রদটিতে বোটিং এর ব্যাবস্থাও রয়েছে। যখন মেঘলা থেকে বেরোবেন তখন হয়তো বেলা ৪টা এবং এই সময়টি নীলাচলে যাওয়ার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময়। কারণ ওখান থেকে খুব সুন্দর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

 নীলাচল : এই পর্যটন স্পটটি বান্দরবান শহরস্থ প্রাকৃতিক স্পটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মনোরম। মেঘলা থেকে এই স্পটটির দূরত্ব ৪.৫ কি.মি। 

 

 নীলাচল এর উপর থেকে বান্দরবান শহর

মেঘলা থেকে বাসস্টপের দিকে কিছুটা এসে ডানদিকে খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে নীলাচল এর রাস্তাটি। এটিতে যাওয়ার উপায় হচ্ছে সি.এন.জি কিংবা জিপ। নীলাচলের সামনে থেকেই সি. এন.জি বা জিপ পাওয়া যায়। আপনি চাইলে আসা যাওয়া উভয়ের জন্যই রিজার্ভ করতে পারেন। কিন্তু আমি সেটা না করবো, কেননা রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে গেলে একটা চাপ বা তাড়া কাজ করে। চাপ নিয়ে ঘুরার কোন প্রয়োজন দেখি না। ওখানে বসার, হাঁটার, ঘুরে দেখার মতো যথেষ্ট জায়গা আছে। মেঘলার সামনে থেকেই আমরা একটি সি.এন.জি ভাড়া করেছিলাম শুধু যাওয়ার জন্য। আসা যাওয়ার ভাড়া ৪০০ টাকা কিন্তু শুধুমাত্র গেলে ২৫০ টাকা ভাড়া নেবে। রাস্তা মেরামতের টুল হিসাবে মাঝপথে নেবে আরো ৫০ টাকা। নীলাচলের উঠার রাস্তাটি বেশ খাড়া। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে গাড়ি গেটের সামনে থাকবে। নীলাচল এর প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা। 

নীলাচল উপর থেকে

 

ভিতরে বেশ কিছু ঘৃুরে বেড়ানোর জায়গা সহ আদিবাসীদের বিভিন্ন পণ্যের দোকান আছে। চা কফি ডাব সহ খাবারের দোকানও আছে কয়েটি। সূর্যাস্তের সময় কখন যে চলে আসবে টেরও পাবেন না। ওখানে প্রচুর মানুষ সূর্যাস্ত দেখতে যায় এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিলো না। সূর্যাস্তের সময় আসতেই দেখতে পেলাম হু হু করে বাড়ছে মানুষের ভিড়। পুরো রাস্তাটা আমরা হেঁটেই ফিরেছিলাম। যেহেতু নিচের দিকে হাঁটতে মোটেই কষ্ট হবেনা। রাস্তাই আপনাকে নিচের দিকে টেনে নামাবে। সূর্যাস্তের মিনিট পাঁচেক আগে আলো থাকতে থাকতে আমরা হাঁটা শুরু করি, পুরো রাস্তাটা বেশ আনন্দের সাথে হুল্লোর করতে করতে নেমে আসি যেখান থেকে সি.এন.জি উপরের দিকে উঠা শুরু করেছিলো সেই মোড়টিতে। আলসেমি ঝেড়ে হেঁটে আসার ব্যাপারটিতে একমত হলে নতুন একটি আনন্দের মাত্রা যোগ হতে পারে আপনার জার্নিটিতে। মোড়ের দোকানটি চা পেয়ে যাবেন। এক কাপ চা খেতে খেতে উবে যেতে পারে আপনার হাঁটার শারীরিক ধকল। তারপর বাকী রাস্তাটা হেঁটে কিংবা সি.এন.জি করে বাসস্টপ পর্যন্ত পৌছে যেতে পারেন। ততক্ষণে রাতের আবহ বিরাজ করছে চারপাশে। পরের দিন আমাদের থানচি যেতে হবে।

 থানচির পথে পথে : বান্দরবান থেকে থানচির দূরত্ব ৭৫ কি.মি। বাহন- বাস, জিপ, সি.এন.জি, মাহিন্দ্র। এই পথে প্রথমেই পড়ে মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট (নাথিং স্পেশাল) এখান থেকে নিচে সাঙ্গু নদী দেখা যায়।

 


 মিনিট পাঁচেক পরে পড়ে শৈল প্রপাত ( বান্দরবান থেকে ৭ কি.মি.), শৈল প্রপাত থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ওয়াই শেপ রাস্তার বামদিকেরটি ধরে রুমা বগালেক কেওক্রাডং যাওয়া যায়। ঐ পথে কেওক্রাডং পর্যন্ত আমার একবার যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু আজকের জার্নি সার্কেল শেপ । ডানদিকে উপরের দিকের রাস্তাটি ধরে উঠে গেলে পড়ে চিম্বুক, চিম্বুকের পরে নীলগিরি।

উপরে ডানদিকে চিম্বুক, নীলগিরি, থানচি

 

এক্ষেত্রে আমাদের সমস্যাটি ছিলো এই রুটে সারাদিন ৪ টি বাস যায় ৪ টি বাস আসে।  দুই ঘন্টা পরপর বাস ছাড়ে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি স্পট ছুঁতে হলে আমাদের এক বাস থেকে নেমে স্পট দেখে পরের বাস ধরা মেনটেন করা কষ্টকর এবং ঝামেলাপূর্ণ। যদিও বাস সবচেয়ে সাশ্রয়ি। ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। সি.এন.জি সবকয়টা স্পট ঘুরিয়ে থানচি পৌছে দেবে সেক্ষেত্রে সি. এন.জি এর রিজার্ভ ভাড়া ৩ হাজার টাকা। জিপ এই পথের সবচেয়ে উপযুক্ত বাহন যেটাকে স্থানীয়রা চান্দের গাড়ি নামে ডাকেন। চান্দের গাড়ি বান্দরবান-থানচি আপ ডাউন রিজার্ভ ৫ হাজার টাকা। শুধুমাত্র পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে ৪ হাজার টাকা। এর অসুবিধা একটি এতে যাত্রি ধরে ১২ জন। যাত্রি সংখ্যা কমপক্ষে ১০ জন না হলে খরচটা একটু বেশি হয়। সুবিধা বেশ কয়েটি এই পথের পুরোটাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঠাঁসা, যার স্বাদ বর্ণনা নয় চোখে দেখেই অনুধাবন সম্ভব। হুড খোলা এই গাড়িগুলোতে এইসব সৌন্দর্য সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়।আমাদের এক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা ছিলো, আমাদের ট্যুর মেম্বার মাত্র চারজন। তবুও আমরা সন্ধ্যায় নীলাচল থেকে ফিরেই একটি শেয়ার জিপ ম্যানেজ এর জন্য চলে গিয়েছিলাম থানচি বাসস্ট্যান্ড এ। 

থানচি বাসস্ট্যান্ড

 

বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড এর সামনের কালভার্টটি পার হয়ে অল্প সামনে গেলে হাতের ডানদিকে যে রাস্তাটি প্রবেশ করেছে মিনিট পাঁচেকের হাাঁটা পথেই থানচি বাস স্ট্যান্ড। জিপ এর ড্রাইভারের সাথে আলাপ করে ম্যানেজও হয়েছিলো। চারজন ১৮০০ টাকা। কিন্তু সকালে অন্য গ্র্রুপটি শেষ মুহুর্তে তাদের অবিবেচকসূলভ আচরণের মাধ্যমে তাদের থানচি যাওয়ার পরিকল্পনাটি বাতিল করলে আমরা বিপত্তিতে পরে যাই। হারানো বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে সময়ক্ষেপন না করে আমি সবসময় দ্রুত নতুনের সন্ধান করার পক্ষে। এমনিতেই অপেক্ষা করে করে আমাদের ২ ঘন্টা সময় ইতিমধ্যেই আমরা খরচ করে ফেলেছি। সাথে সাথে রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম ডিসি অফিসের মোড়ে সি. এন.জি স্টেশনে।  সি. এন.জি নিয়ে ভাবলেও মাহিন্দ্র দিয়েও যে যাওয়া যেতে পারে এ বিষয়টি একবারের জন্যও মাথায় আসেনি। একটা মাহিন্দ্রকে সামনে পেয়ে ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই সে ১২০০ টাকা চাইলো।  ১ হাজার টাকাতেই রাজি হয়ে গেলো। কম টাকায় পাওয়াতে চান্দের গাড়ি না পাওয়ার ব্যাথা কিছু সময়ের জন্য উপশম হলো। ভাড়া কম হলেও ছাওনির কারণে চারপাশটা না দেখতে পারা সি. এন.জি আর মাহিন্দ্র‘র একটা অসুবিধা। মাহিন্দ্র থানচি পর্যন্ত না নিয়ে নিয়েছিলাম নীলগিরি পর্যন্ত। পরিকল্পনা ছিলো এর পরের অংশটুকুতে একটি বাস ধরবো, সেক্ষেতে বেশি বিড়ম্বনা হবে না। মাহিন্দ্র আমাদের সবকয়টি পয়েন্টেই থামিয়ে সময় দেবে কথা বলে নিলাম।  

শৈলপ্রপাত : বান্দরবান থেকে ৭ কি.মি দূরে থানচির পথে শৈলপ্রপাত। বর্ষাকালে এটি পানির ধারায় পূর্ণ থাকলেও শীতকালে যথেষ্ট শুষ্ক। এই পানি স্থানীয়রা তাদের নিত্য কাজে নানাভাবে ব্যবহার করে থাকেন। এখানে শৈলপ্রপাতের পাড়েই আদিবাসীদের নানা পণ্যের দোকানও আছে।

শৈলপ্রপাত

 

 চিম্বুক  : বান্দরবান থেকে ২৩ এবং শৈলপ্রপাত থেকে চিম্বুক পাহাড়ের দূরত্ব ১৬ কি.মি.। সময় লাগে ৫০ মিনিটের মতো। বান্দরবান থেকে চিম্বুক, চিম্বুক থেকে নীলগিরি, নীলগিরি থেকে থানচির কাছাকাছি পর্যন্ত পুরোটা রাস্তা গাড়ি কখনো উপরে  কখনও বা খানিকটা নিচের দিকে নেমে আবার উপরের দিকে উঠবে। কোথাও অত্যাধিক খাড়া কোথাও বা খানিকটা নিচের দিকে চিম্বুকের ২৫০০ ফুট থেকে নীলগিরির ২২০০ ফুট হয়ে আবার উপর নিচ করতে করতে রওনা ছুটে চলবে থানচির পথে।

 

চিম্বুকের নব চত্বর

 

চিম্বুকের প্রবেশ ফি ২০ টাকা। এটা মূলত একটা ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে নাকি চট্টগ্রাম দেখা যায়। খালি চোখে অতটা দেখা সম্ভব নয় বলেই হয়তো আমরা দেখতে পাইনি। গেটের বাইরে নানা আদিবাসী দোকানীদের পাহাড়ি ফলমূল আর হস্তশিল্পের দোকান রয়েছে। এখানে কলা খেয়েছিলাম অনেকগুলো, বেশ ভালো লেগেছে। ৩০-৪০ মিনিট সময় এখানে আমাদের ব্যয় হয়েছিলো।

একসময় চিম্বুককেই ধরা হতো সর্বোচ্চ চূড়া হিসাবে। পরবর্তীতে কেওক্রাডং, তাজিংডং সহ আরও উঁচু উঁচু চূড়ার সন্ধান বান্দরবানে মিলেছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়গুলো বান্দরবানেই অবস্থিত। বান্দরবান এর সাথে মায়ানমার এর রয়েছে ১৯৩ কি.মি এর দীর্ঘ সীমান্ত। থানচি রোডে যেতে যেতে দেয়াল সদৃশ মায়ানমার এর  উঁচু পাহাড়গুলো আপনার গাঁ ছমছমের কারণ হতে পারে। আমরা যখন চিম্বুকে যাই সে সময়টাতে চিম্বুকে পাহাড়িদের জমি  শিকদার গ্র্রুপ কতৃক দখল এর বিরুদ্ধে আদিবাসীদের বিক্ষোভ চলছে এবং সারাদেশে সচেতন বাঙালীরাও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। পাহাড়ি ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত ইতিহাস এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তিটি পাঠ করলেই বুঝতে পারবেন এ দাবী এ বিক্ষোভটি কতটা যৌক্তিক।


নীলগিরি : চিম্বুক থেকে নেমে চিম্বুকের চূড়া থেকে বাম দিকে যে সুন্দর সর্পিলাকার রাস্তাটি দেখা যায় নিচে সেটি দিয়ে আনারস আম কমলার বাগান সহ নানা গাছ পালার সারিকে পাশে ফেলে ছুটে চলবে আপনার গাড়ি। 

 

চিম্বুক থেকে নীলগিরি যাওয়ার পথ (চূড়ার সাদা অংশ)


 

পাশে পড়বে হাজার ফুটের গিরিখাদ, অদূরে অগমণযোগ্য বলে মনে হওয়া পাহাড়ের চূড়ায় পাহাড়ি আদিবাসীদের বাড়ি। পাহাড়ি ফলমূল সব্জী ইত্যাদি সমেত যাত্রী ছাউনিতে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত আদিবাসীদের ফেলে বান্দরবান থেকে ৪৭ আর চিম্বুক থেকে ২৪ কি.মি. এর পথটি পাড়ি দিয়ে আপনি পৌছে যাবেন নীলগিরি।

 

নীলগিরি রিসোর্ট এর সামনের চত্বর, যাত্রী ছাউনি

 নীলিগিরি স্থানটিও পাহাড়িদের জন্য এক ক্ষতের স্থান। কারণ এটিও শান্তিচুক্তির বরখেলাপের একটি নিদর্শন। সেনাবাহীনি কতৃক নির্মিত এবং পরিচালিত পাহাড়ের ২২০০ ফুট উপরের এই স্পটটির প্রবেশ ফি ৬০ টাকা জনপ্রতি। আমরা এই পর্যন্তই আমাদের গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। আপনার গাড়িটি যদি এর পরেও থাকে তাহলে এর জন্য পার্কিং চার্জ গুনতে হবে ২০০ টাকার মতো ( যানবাহন ভেদে )। 


 

নীলগিরি হেলিপ্যাড থেকে রিসোর্ট
 

নীলগিরিতে মূলত সেনাবাহীনির রিসোর্ট, রেস্তোরা ভিউ পয়েন্ট, হেলিপ্যাড ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য বিশেষ কিছু নেই। উপরে খুব কাছে মনে হবে সাদা মেঘের পরত।


 

নীলগিরি থেকে নিচে সাঙ্গু নদী

 নিচে বহমান সাঙ্গু নদী, জুম বাগানে বাগানির বাঁশের ঘর আর নানা মাপের পাহাড়, পাহাড়ের উপর দিয়ে তৈরি পিচঢালাই মনোরম রাস্তা। 

 

নীলগিরির হেলিপ্যাড থেকে নিচের পাহাড়ি রাস্তা

গেটের বাইরে পাহাড়ি পেঁপে, কলা, নারকেল, জাম্বুরা সহ নানা ফলমূল এর দোকান। প্রবেশের সময় এখান থেকে আমরা পেঁপে খেয়েছিলাম ২ ধরণের। সমতলের চেয়ে যেকোন ফলমূল বা সব্জীর স্বাদ পাহাড়েরটা বেশি হয়। এখানেই দুপুর ২ টা নাগাদ আমরা দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম। চিকেন বিরিয়ানি, দাম স্বাভাবিক ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এখানে খেয়ে আমরা থানচি যাওয়ার বাসের অপেক্ষা করছিলাম যাত্রি ছাউনিতে। বাসের সময় সম্বন্ধে আমাদের ধারণা থাকায় আমরা বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলাম। সৌভাগ্যজনকভাবে মিনিট ১৫ এর মধ্যে একটি বাস পেয়ে যাই এবং থানচির দিকে রওনা দিই।

থানচি : ইতিপূর্বে কেওক্রাডং থেকে ফেরার সময় বাসের ছাঁদে চড়ার অভিজ্ঞতা ছিলো আমার অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। তাই আমার আগ্রহ এবং মানসিক প্রস্তুতি ছিলো বাসের ছাঁদে করে পাহাড় দেখার। ৪ জনের ৩ জন ছাঁদে উঠলেও জায়গার স্বল্পতার জন্য একজনকে ভিতরে চলে যেতে হয়। পাহাড়িরা তাদের বাজারের পণ্যগুলো সস্তায় পরিবহণের জন্য বাসের ছাঁদ ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও অনেক পাহাড়ি ছাঁদেও ভ্রমণ করে। 

বসার ভালো জায়গা পাইনি। সেই ঝঞ্জাটে রোমাঞ্চ এর মাত্রা বাড়িয়ে আমাদের বাস ছুটে চললো পাহাড়ের খাড়া ঢাল আর কখনোবা নিচের দিকে। এই অভিজ্ঞতা যদি আপনার না থেকে থাকে আপনি কখনও অনুমানও করতে পারবেন না। পাহাড়ি পথে বাসের ভিতর আর ছাঁদে ভ্রমণের ফাঁরাক। এই পথে বাসের ভিতরে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও আমার আছে, যা অত্যন্ত পানসে। রোলার কোস্টারের মতো বাস আপনাকে নিয়ে ছুটতে থাকবে, বারবার একের পর এক নানা উচ্চতা নানা বৈচিত্রতার পাহাড় দৃশ্যপটে হাজির হবে। সুন্দর আর ভয়ের এক ঝাঁপাঝাঁপি চলতে থাকবে আপনার ভিতরে। উপরে উঠার সময় মনে হবে যদি আর না উঠতে পারে ! যদি পিছনের দিকে পড়তে শুরু করে ! থামাবে কি করে ! আবার নিচের দিকে নামার মুহুর্তে মনে হবে- যদি থামাতে না পারে ! কোন কারণে যদি ব্রেক ফেল করে ! সোজা হাজার হাজার ফিট নিচে! কিন্তু বাসের ভিতরে বসলে কিছুতেই এইসব চিন্তা আপনাকে ভুগাবে না। সেক্ষেত্রে আয়েশি নিরীহ পর্যটক হলে অবশ্যই পরামর্শ থাকবে ভিতরেই থাকুন। 

যদিও নিলগীরি থেকে থানচির দূরত্ব ৩০ কি.মি. বান্দরবান থেকে ভাড়া ছিলো ১৭০ টাকা তথাপিও এক্ষেত্রে বাসের হেলপার আমাদের থেকে ৩০ কি.মি. এর ভাড়া নিয়ে নিলো ১০০ করে। এক্ষেত্রে আমাদের একটু মন খারাপ ই হয়েছিলো। কারণ ব্যপারটা শুধু টাকার অঙ্কের নয়, ন্যয্যতা আর অন্যয্যতার; ঠকা’র। মাঝখানে বারোপারা বাজারে মিনিট পনেরর একটা স্টপেজ সহ ২ ঘন্টায় সন্ধ্যার অনেক আগেই  আমরা পৌছে গেলাম থানচি বাসস্ট্যান্ড এ।

 

সর্ব বামে টিলার উপরে সেনা রিসোর্ট,ডানপাশে সাঙ্গু নদীর পাড়েই থানচি বাজার

 ব্রিজ এর এ পাড়ে মুখেই বাসস্ট্যান্ড, অপর পাড়ে ব্রিজ পাড় হলেই ডানপাশে বাজারের প্রবেশমুখে জিপ আর বাইক স্ট্যান্ড এবং তা পাড় হয়ে গেলেই ছোট মূল বাজারটি। জিপস্ট্যান্ড এর জিপ মূলত বান্দরবান এর জন্যই। এছাড়া কেউ আলীকদম যেতে চাইলেও এখান থেকেই জীপ নিতে হয়। বাইক মূলত আলীকদমের জন্য।


 জিপস্ট্যান্ড

 

হোটেলের সন্ধ্যান ই এই মুহুর্তের প্রথম এবং প্রধান কাজ। বাসস্ট্যান্ড এ একটি হোটেল রয়েছে। এটি অপরিচ্ছন্ন এবং সবচেয়ে সস্তা। ৩-৪ জন ৫০০ টাকার মধ্যে থাকা যায়। সম্প্রতি দুইটি নতুন হোটেল হয়েছে। একটি টাইল্স আচ্ছাদিত হলেও সাধারণ ভাড়াও কম ১০০০ টাকার মধ্যে ২-৩ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। এটি শুটকি বাজারের পাশে, আমরা এই হোটেলটিতে রুম খালি পাইনি। আরেকটি অপেক্ষাকৃত বিলাসবহুল, বাজারের প্রবেশ মুখেই। আমরা যেদিন গেলাম বিলাসবহুল হোটেলটি সেদিন ই উদ্বোধন হয়েছিল। এটির ভাড়া বেশি। ৪ জনে একরাতের জন্য আপনাকে ২৫০০-৩০০০ টাকা গুনতে হবে। এছাড়াও এখানে সস্তায় এবং আদিবাসী ফ্লেভার এর, কাঁঠের তিনটি কটেজ রয়েছে টিলার উপরে। থানচি যারা বেড়াতে যায়, তাদের বেশিরভাগের ই সবচেয়ে পছন্দের এই তিনটি কটেজ এর একটি। কারণ এগুলোর পরিবেশ, প্রাকৃতিক অবস্থান, কম ভাড়া এবং নির্মাণ শৈলী, একসাথে একই রুমে এমনকি ৮-১০ জনেরও থাকার ব্যবস্থা। এগুলোর নাম- থানচি কুটির।


থানচি কুটির কটেজ ( এর আগে একটি, সামনের রাস্তাটি ধরে উপরে উঠলে আরেকটি)

 

 একই টিলার উপরে একই পথে উপরের দিকে ৩ টি রিসোর্ট। যারা নিছক ট্যুরিস্ট নন, ট্রাভেলার তাদের প্রথম পছন্দ এই কটেজগুলো। যে কেউ সানন্দে থাকতে পারেন। এই হোটেলগুলোতে ৪ জন এর একটা রুমে আমরা ১ হাজার টাকায় ছিলাম। কটেজগুলোতে একটা অসুবিধা কেউ কেউ বোধ করতে পারেন, এগুলোতে কমন বাথ, তবে পরিচ্ছন্ন।

 

কটেজ

ফ্রেশ হয়ে অল্প বিশ্রাম নিয়ে সাঙ্গু পাড়ের থানচির ছোট বাজারটি ঘুরে দেখতে পারেন, মায়াময়। নানা ভাষা, নানা বর্ণ, নানা পেশা, আড্ডা, কেনাকাটা কিংবা মিনিমালিস্ট জীবনের নানা রং এর মুখ।


থানচি বাজার
 

রুমের জানলা থেকে দেখা যায় পাহাড়ি দৃশ্য। শীতের রাতের পাহাড়ি হিম বাতাসে যদিও জানলা বন্ধ করা ছাড়া গতি নেই। বাজারে কিছুটা সময় কাঁটিয়ে ছোট্ট হোটেলগুলোর কোন একটিতে রাতের খাবার খেয়ে রুমে ফেরার পথে যদি জোছনা থাকে কুটির এর টিলার ঠিক নিচের রাস্তাটি ধরে ঠিক পাশেই ডানদিকে যে ব্রীজটি দেখা যায় সেটি সাঙ্গুর শাখার নিচ থেকে অনেক উপরে, সেখানে গিয়ে দাঁড়ালে দেখতে পাবেন এক মায়াময় দৃশ্য। তার জন্য জোছনা রাতেই আপনাকে সেখানে দাঁড়াতে হবে। আমরার পরিকল্পনা ছাড়াই ব্রীজটি দেখে তার উপরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেখানে ত্রিশটি মিনিট কোথা দিয়ে চলে যাবে টেরও পাবেন না। তারপর রুমে ফিরে পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা আর গাল গল্প করতে করতে ঘুম। সকালে উঠে কুয়াশার কটেজ বেশ লাগে।

 

ভোর এর কটেজ


 

থানচি কুটির নামক টিলার উপরস্থ যে হোটেল তিনটির কথা বললাম সেই টিলার পথটিতে ব্রীজ এর মুখ থেকে ২০০ মিটার সামনে দোকানের সারির মাঝখান দিয়ে একটি সরু রাস্তা দিয়ে ঢুকতে হয়। যে কাউকে ‘থানচি কুটির‘ বললেই পথ দেখিয়ে দেবে। 

 

সর্বডানে বাজারের নিচে নদীর নৌকাগুলো নাফখুম এ যাওয়ার (ব্রীজ এর উপর থেকে)

যারা নাফাখুম, আমিয়াখুম, দেবতাখুম এ যাবেন তাদের এই ঘাট থেকেই নৌকা নিয়ে যেতে হবে গন্তব্যে। সেক্ষেত্রে সাঙ্গুতে প্রতি নৌকার জন্য খরচ পড়বে ৫ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৫ জন। আমাদের যেহেতু এবারের গন্তব্য নাফাখুম নয়, ডিমপাহাড় আলীকদম হয়ে চট্টগ্রাম তাই সে পথের কথাই আপাতত পাড়া যাক।


আলীকদম : পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গুছিয়ে বের হয়ে থানচি বাজার এর ব্রীজের মোড়টিতে দেখবেন আদিবাসীদের পাহাড়ি নানা সব্জী ফলমূলের হাঁট জমেছে। বিক্রি হচ্ছে কেঁটে আনা শুকরের মাংস, পাহাড়িদের বানানো তৈজসপত্র সহ নানা জিনিস, নিয়ে যাচ্ছে যার যা প্রয়োজন।


বাজার এর প্রবেশ মুখে জীপ স্ট্যান্ড এ আদিবাসী সব্জী বাজার




নানা সব্জী, নানান মানুষ, নানান সাঁজগোঁজ, জীবনযাপন এর নানা ধরণ এর যেনো পসরা বসেছে সদ্য ভোরেই। এতদিনকার শোনা জীবনযাপন এর চিত্রগুলোর কিয়দংশ বাস্তব হিসাবে হাজির হবে আপনার সামনে। আমাদের এ দেশটিতে যে বাঙালী ছাড়াও আরও নানা জাতি, বর্ণ, সম্প্রদায় এর মানুষ এর বসবাস তা উপলব্দি করার পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার ধরণ থেকে নানা কারণেই সমৃদ্ধও হবেন, ইচ্ছে থাকলে নিজের ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত  থাকলে বিগত দিনের চিন্তা সুবিন্যস্তও হতে পারে খানিকটা।



 

নাস্তা সেরে আপনাকে রওয়ানা দিতে হবে আলীকদমের উদ্দেশ্যে। আগেরদিন বাস থেকে নেমে ব্রিজ পাড় হওয়ার পর এপাড়ে বাজারের প্রবেশমুখে যে বাইকগুলো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন এগুলো ভাড়ায় চালিত। একটি বাইকে দুজন যাত্রী বহন করে। আপনি একা কিংবা দুজন গেলেও ভাড়া একই ৫০০ টাকা। বাইকে গেলে আমার পরামর্শ থাকবে একজন ই এক বাইকে যান। বাইকের অভাব হবে না, পেয়ে যাবেন সহজেই।

ডিম পাহাড়ের রাস্তাটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাস্তা ২৫০০ ফুট। এটি সেনাবাহীনি কতৃক ১২ বছরে তৈরি। থানচি থেকে আলীকদমের দূরত্ব ৩৪ কি.মি.। এই রাস্তাটি চমৎকার, তবে বেশ খাড়া আঁকাবাঁকা। এই পথে আলীকদম পর্যন্ত আপনাকে দুইবার দুইটি সেনা চৌকিতে নেমে আপনার আইডি কার্ড এর ফটোকপি জমা সহ ঠিকানা এন্ট্রি করতে হবে। যা অত্যন্ত বিদঘুটে একটা ব্যপার। সাময়িক সময়ের জন্য নিজদেশেই নিজেকে পরবাসী মনে হতে পারে, বিরক্ত হতে পারেন। এই বিষয়টিও শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন। বিড়ম্বনা এড়াতে দুই কপি আইডির ফটোকপি অবশ্যই সাথে নিবেন।

 

প্রথম সেনা চৌকি থেকে নিচের থানচি

 

এই সেনা চৌকিটির অল্প পরেই ডিম পাহাড়। বাইকের চালককে আগেই বলে রাখবেন যেনো ডিম পাহাড়টি আপনাকে দেখায়, নাহলে বলতেই পারবেন না কখন সেটি চলে গেলো। বাইক ছাড়াও আলীকদম জীপে যাওয়া যায়, তবে এখানে শেয়ার জীপ মেলা দুষ্কর। আমরা ঘন্টাদুয়েক অপেক্ষা করেও পাইনি। পরে বাইকেই গিয়েছিলাম। শেয়ার জিপ ১০ জনের ভাড়া ৩৫০০-৪০০০ এর মধ্যে। এই পথের বাইক জার্নি আজীবন মনে থাকবে আপনার। জীপে গ্র্রুপ থাকলে সাশ্রয়ী এবং আনন্দদায়ক হবে।

আলীকদম পৌছার ১ কিলোমিটার এর মতো আগেই আলীর সুরঙ্গ পরে। বাইক চালককে বলে রাখলে আপনাকে সেখানেই নামিয়ে দেবে। আমরা না জানার কারণে পরবর্তীতে আলীকদম বাজার থেকে অটো নিয়ে সেপথেই আবার আসতে হয়েছে। আলীকদম বাজার থেকে আলীর সুরঙ্গ ২ কিলোমিটারের মতো।

আলীর সুরঙ্গ : এই সুরঙ্গটি সমন্ধে জানতে গুগল করলেই সম্ভব হবে। পরিসর সীমিত রাখার খাতিরেই সে গল্প আপাতত এখানে এড়িয়ে যাই। আপনি যে অটোটিতে আলীর গুহায় যাবেন সেই অটোওয়ালার ফোন নাম্বারটি রেখে দেয়া উচিত, নাহলে ফেরার পথে অটো পেতে দেরি হতে পারে। আমরা সেটিই করেছিলাম।

সুরঙ্গে যাওয়ার পথ


অনেকেই এখানে যেতে স্থানীয় গাইড নিয়ে যায়, কিন্তু এর কোন প্রয়োজন নেই। অটো নদী পাড়ের যে একটি মাত্র দোকানের সামনে নামাবে, সেই দোকানের পাশে একটি ব্রিজ হয়েছে (আমরা যখন গিয়েছি তখন ব্রীজ এর কাজ অল্প বাকী ছিলো, তাই হাঁটুজল পাড় হয়ে নদী দিয়ে নেমেই যেতে হয়েছে)। ব্রীজ এর অপর পাশের পথ ই আপনাকে সুরঙ্গের কাছে নিয়ে যাবে, একটি মাত্র পথ। ১০ মিনিট উপরের ছবির মতো পথে হাঁটলেই পৌছে যাবেন সুরঙ্গের মুখে। এখানে কেবল সুরঙ্গ নয় এই পথটিও একটি দর্শনীয় জায়গা, অত্যন্ত চমৎকার। নিচে গোড়ালির উপর পর্যন্ত পানি শীতকালেও এখানে থাকে। সেজন্য শীতকাল ই এখানে যাওয়ার উৎকৃষ্টৎ সময়। তবে সাথের ব্যাগ জুতা অবশ্যই ব্রীজের পাশের দোকানটিতে রেখে আসবেন। ওখানে ১০ টাকায় এগুলো রাখে। না হলে কাঁদা পানিতে অযথা বিড়ম্বনা হবে।


গুহায় উঠার সিঁড়ি


গুয়ায় উঠার জন্য গুহামুখেই লোহার সিঁড়ি দেওয়া আছে, সহজেই উঠা যায়। অবশ্যই টর্চ জাতীয় কিছু লাগবে। মোবাইল আলোর কথা চিন্তা করবেন না, কারণ মোবাইল এক হাতে রাখলে হাত অন্য কাজে ব্যাবহার করা যায় না (দুটো হাতই ওখানে প্রয়োজন পড়বে) সেক্ষেত্রে গুহায় উঠতে সমস্যা হয়। মুখে ধরা যায় এমন ছোট টর্চ অথবা হেডব্যান্ড হলে ভালো হয়। পথটি দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে সামনে যে সময় সিঁড়িটি নজরে আসবে সেখানে ওপরে একটি গুহা আবার সেখান থেকে বাম পাশে একটি পথ গেছে ঐ পথেও আরেকটি সুরঙ্গ রয়েছে, সেটি নিচে এবং ওটিই এখানকার সবচেয়ে বড় এবং রোমঞ্চকর সুরঙ্গ। দ্বিতীয় সুরঙ্গটি সমতলে, ছোট গর্তটিকে দেখে এর ভিতরে যে এতো বড় একটি গুহা থাকতে পারে তা সহজে আপনার বিশ্বাস হবে না। ৫ থেকে ৭ ফুট খুব সরুমত পথ প্রায় হামগুড়ি দিয়ে ঢুকলেই পড়ে সামনে পড়বে নিকষ অন্ধকার সহ অনেক বড় একটি গুহা। বিশেষ করে এই গুহাটির জন্য হেডব্যান্ড লাইট বা ছোট লাইট প্রয়োজন। আর সোজা যে সুরঙ্গটি ওটি দৈর্ঘে ছোট। ছোটটি আগে দেখে পড়ে অপরটিতে যাওয়াই উত্তম। আলীকদমে আলীর গুহা ছাড়াও বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট রয়েছে। চাইলে কেউ আলীর গুহা থেকে ঐ সমস্ত স্পটগুলোতেও যেতে পারেন। শুধুমাত্র আলীকদমেই বেশ কয়েকদিন ঘুরে ফিরে কাঁটিয়ে দেয়ার মতো নানা জায়গা রয়েছে। যেহেতু এইবার আমাদের সে আকাঙ্খা নেই, সেহেতু সে গল্প অন্য কোনদিন।

আলীর গুহা থেকে অটোতে আলীকদম বাসস্ট্যান্ড ফিরে ৬০ টাকা ভাড়ায় বাসে আপনি চলে আসবেন চকোরিয়া বাসস্ট্যান্ড এ। এছাড়াও এখানে জীপ যোগেও টিকিট কেটে চকোরিয়া যাওয়া যায়। আলীকদম থেকে চকোরিয়ার দূরত্ব ৪৩ কি.মি.। প্রায় পুরোটাই পাহাড়ি পথ। সময় লাগবে ১.৩০ ঘন্টা। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এই পথটি বোধহয় সমতল কিন্তু পরবর্তীতে দেখি এই পথটিও অত্যন্ত সুন্দর পাহাড়ি একটি পথ। এর চারপাশে নানা সব্জীর ক্ষেত সহ নানা সৌন্দর্য ছড়ানো।

চকোরিয়া বাসস্ট্যান্ডটি কক্সবাজার রোডে কক্সবাজার থেকে ৪৭ কি.মি দূরে অবস্থিত। এখানে এসে আমরা দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম। দুপুরের খাবার এখানে খেয়ে চাইলে কক্সবাজারের দিকেও চলে যেতে পারেন। এখান থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট, ভাড়া ১২০ টাকা। আমাদের একজন এখান থেকে কক্সবাজার চলে যায় আমরা তিনজন চট্টগ্রাম চলে আসি। এখান থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৯৭ কি.মি.। উভয় দিকেই শ্যামলী, সাউদিয়া, হানিফসহ অনেক ভালো বাস এখান থেকে পাওয়া যায়। ২০০ টাকায় টিকিট করে ৩ ঘন্টায় (রাস্তা সরুর কারণে এত সময় লাগে) সন্ধ্যার মধ্যেই আমরা পৌছে যাই চট্টগ্রাম শহরে। এর সাথে আমাদের শেষ হয় ৪ দিনের এই সার্কেল শেপ জার্নি। 

পরের দিন ভোর ৭টায় আমাদের বিজয় এক্সপ্রেস এর টিকিট কাটা ছিলো। স্টেশনের গেটেই একটা হোটেলে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনজনের একটি রুম নিই। রাস্তার পাশের রুম হওয়ায় স্টেশনের ট্রেন টাইম আর প্লাটফরম নম্বর এর ঘোষণা হোটেলে শুয়েই আমরা শুনতে পাই স্পষ্ট। সারাদিনের ধকল শেষে গোসল সেড়ে ৩০ মিনিট এর একটা বিশ্রাম নিয়ে আমরা পতেঙ্গা বীচে চলে যাই। বীচের  আগে যেখানে বাস থামে সেখানে বাস থেকে নেমে নাস্তা সেরে ১০ টাকায় অটোতে পতেঙ্গা বীচ। স্টেশন গেট এর সামনে থেকে বাস সি.এন.জি সহজে পাওয়া গেলেও সময় লাগে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। ঘন্টা দুয়েক সময় ওখানে কাঁটিয়ে বীচ এর পাড়ের মার্কেট থেকে চাইলে কিছু কেনাকাটাও করে নিতে পারেন। রাত ১২ টার পূর্বেই রুমে ফিরে একটা ঘুম দিই আমরা। পরদিন ভোরে উঠে নিচের ফুটপাত থেকেই নাস্তা সেরে চেপে বসি বিজয় এক্সপ্রেসে। বিকেল ৪ টার মধ্যেই আমরা পৌছে যাই ময়মনসিংহ স্টেশনে, তারপর বাড়ি।

বিঃদ্রঃ এই ব্লগের ২টি বাদে বাকী ছবি এবং তথ্য লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা। ছবি কিংবা তথ্য যে কেউ বিনা অনুমতিতেই নিতে পারেন। এমনকি নিজের বলে চালিয়ে দিলেও কোন অভিযোগ থাকবে না। ধন্যবাদ।

সোনাদিয়া : আ ডিজার্টেড আইল্যান্ড

 সময়কাল ২০২৪।  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর জনাকীর্ন তিনটি পয়েন্ট ডলফিন মোড় থেকে শুরু। প্রথমটি কলাতলী শেষেরটি লাবণী আর মাঝের পয়েন্টটির নাম সুগন্...