রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৮

ত্রিপুরা : এ জার্নি অব বিউটি ।

পোস্ট অফিস চৌমুহনী মোড়, আগরতলা


ভারতের ২৯ টি রাজ্যের মধ্যে অধিকাংশ পার্বত্য সবুজ ভূমির প্রায় ৪০ লাখ মানুষের ১০ হাজার ৪৯১ বর্গকিলোমিটারের রাজ্য ত্রিপুরা। এর তিন দিকে বাংলাদেশ একপাশে মিজোরাম ও আসাম। বর্তমান রাজধানী আঁগরতলা হলেও একসময় এর রাজধানী ছিলো উদয়পুর।

মটর স্ট্যান রোড, আগরতলা।

আঁগরতলা ছোট শহর। বহুতল ভবন বলতে যা বুঝি আমরা তার প্রায় শতভাগ ই বড়জোড় ৪ কিংবা ৫ তলা । বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা, ধর্ম, ভাষাভাষির মানুষের অবস্থান থাকলেও এখানে মানুষের বৈষম্য ততটা বাড়াবাড়ি নয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর হার প্রায় ৮৫ ভাগ, মুসলিম ৮ ভাগ অার অন্যান্য ৭ ভাগ। বাঙালী বেশিরভাগ হলেও বিভিন্ন আদিবাসীদের অনুপাত প্রায় ১৮ শতাংশ। এখানকার বাংলা শুনলে আপনার মনেই হবে না আপনি বাংলাদেশের বাইরে আছেন। এর প্রধান কারণ হলো এখানকার বাঙালীদের প্রায় বেশিরভাগের ই পূর্বপুরুষ বাংলাদেশ থেকে ৪৭ এর দেশভাগের সময় কিংবা পরবর্তীতে মাইগ্রেট করা।

ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট অঞ্চলের মানুষের জন্য বিদেশ ভ্রমণ হিসাবে ত্রিপুরা ভ্রমণের মতো অল্প খরচে সহজ  ভ্রমণ আর কোথাও নাই।

কিভাবে যাবেন : বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আপনাকে ট্রেন কিংবা বাসে করে আখাউড়ায় নামতে হবে। ময়মনসিংহ থেকে বিজয় এক্সপ্রেসে করে আমাদের আখাউড়া পৌছতে সময় লেগেছিলো মাত্র ৪ ঘন্টা, ভাড়া ২০০ টাকা। ময়মনসিংহ থেকে ছাড়ে ৮:০০ টায় আর আখাউড়া থেকে ফিরে সকাল ১১:৩০ মিনিটে। ট্রেনে যেতে চাইলে সকাল ৬:৩০ এ চট্রগ্রাম মেইল এ যাওয়া যায়, এতে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগে। বিজয়ে ময়মনসিংহ থেকে গেলে আপনাকে আখাউড়ায় রাত্রি যাপন করতে হবে। স্টেশনের পাশেই আপনি ৩০০-৪০০ টাকায় দুই বেড এর মোটুমুটি ভালো হোটেল পাবেন। আমরা আখাউড়ায় রাত্রি যাপন করে ভোরে উঠে অটো রিক্সায় দুইজন ৫০ টাকা ভাড়ায় আখাউড়া আগরতলা  চেকপোস্টে পৌছাই, সি.এন.জি ভাড়াও একই। সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ওখানে ছোট্র দু-একটা খাবার হোটেল আছে , দাম খুবই সস্তা। নাস্তা পর্ব সেরে সেখানেই সোনালী ব্যাংক এর শাখায় আমরা ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা করে জমা দিই। পাশের রুম এন্ট্রি রুম এখানে ১০০ টাকা এরা চা পান খাওয়ার কথা বলে চেয়ে নেয়।

ট্রাভেল ট্যাক্স অফিস, আখাউড়া।

 পাশের বিল্ডিং ‘আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট’ এ আমরা ছোট্র তথ্য ফর্ম পূরণ করে ভিসায় প্রবেশ তারিখ এর সিল নিয়ে বেড়িয়ে আসি। এখানে পাসপোর্ট এ ডলার এন্ডোর্স এর সিল থাকলে আর কোনো বিড়ম্বনা নেই।


উপরোক্ত অফিস থেকে বেরিয়ে নিচের রাস্তা ধরে মিনিট খানেক হাঁটলেই এই অফিসের পাশেই আঁগরতলা ইমিগ্রেশন অফিস। বিডিআর আর বি এস এফ এর চেকপোস্ট দুইটা পাশাপাশি। উভয়েই শুধুমাত্র আপনার পাসপোর্টটা দেখেই যেতে দেবে।

আগরতলার প্রবেশ পথ
 এ পথে মানুষের যাতায়াত খুব কম বলে ইমিগ্রেশন অফিসে কোনো ভিড় নেই। এ অফিসেও আপনাকে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিসের মতো একটি ছোট্র তথ্য ফর্ম পূরণ করতে হবে। সব ঠিক থাকলেও এরা সাধারণত জনপ্রতি ২০০ টাকা ঘুষ না দিলে নানা রকম হয়রানির সুযোগ খুঁজবে। এরা জানে সাধারণত, কেউ হোটেল বুক করে ওখানেস যায় না, কাজেই সব ঠিক থাকলেও আপনি কোন হোটেলে উঠবেন এই তথ্য ফোন নম্বর চেয়ে হলেও আপনাকে আঁটকাতে চাইবে। আমরা দিতে পারিনি তাই টাকা দিতেই হয়েছে। দিতে পারলে কি হতো বলতে পাচ্ছি না। এখানে প্রবেশ তারিখ এন্ট্রি করার পর আরেকজন আপনার সাথে কি আছে ? কত টাকা আছে ? রুপি আছে কি না ? বাংলাদেশী টাকা কত আছে ? ইত্যাদি জানতে চাইবে ( ৫০০০ বাংলা টাকার কথা বলেছিলাম, কোনো সমস্যা হয় নি ) তারপর এসব এন্ট্রি করে বের হলে গেটের সামনেই শহরে যাওয়ার রিক্সা কিংবা অটো পেয়ে যাবেন।

প্রথম কাজটাই আপনার ডলার এক্সচেঞ্জ আর থাকার হোটেল এর সন্ধান হওয়া উচিত। হোটেলে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে আপনি শহরে একটা ঢুঁ মারতে পারেন।

কোথায় থাকবেন : শহরের বিভিন্ন স্থানে হোটেল আছে। আমরা ‘মটর স্ট্যান’ এলাকায় একটা মাঝারী মানের হোটেলে ছিলাম। এখানে বেশ অনেকগুলো হোটেল রয়েছে এসবের ভাড়া ( ডাবল বেড) ৫০০ থেকে ১৫০০ এর মধ্যে। ইমিগ্রেশন অফিস থেকে মটরস্টেন পর্যন্ত অটোরিক্সা বা অটো ভাড়া ৪০ টাকা। যেহেতু আমরা সকাল ১০ টার মধ্যেই আঁগরতলা শহরে প্রবেশ করবো তাই প্রথমদিনটা আমরা সারাদিন শহরে ঘুরবো পরিকল্পনাতেই ছিলো।

মটরস্ট্যান এর আশপাশে উঠলে আপনি সবচেয়ে যে নামটি বেশি শুনবেন তা হলো ‘বটতলা মোড়’। মটর স্টেন থেকে বটতলা মোড়ের অটো ভাড়া ১০ টাকা। এই পথে মটরস্টেন থেকে অল্প এগুলেই সামনে পড়ে শান্তিপাড়া মোড়। এই মোড়ে ভ্রাম্যমান মানি চেঞ্জার পাবেন। ঐ মোড়ে গেলেই ওরা আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, কিংবা আপনি কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। শান্তিপাড়া মোড়ে দাঁড়িয়ে ডান দিকে দেখা যায় সাদা ধবধবে উজ্জয়ন্ত প্যালেস, স্থানীয়রা একে রাজবাড়ি বলে।

উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ

 আর বাম দিকের রাস্তায় ‘কলকাতা বাজার’ এখান থেকে আপনি সস্তায় বিভিন্ন কাপড় চোপড় কিনতে পাবেন। মোড় থেকে অল্প এগোলেই ‘কামান চৌমুহনী’ এর পাশেই বিগ বাজার এখান থেকে নানা ধরণের জিনিস কেনাকাটা করতে পারবেন এছাড়াও বিগবাজারে রয়েছে তিনিটি সিনেমা হল। কামান চৌমুহনি থেকে অল্প এগোলেই সিটি সেন্টার এখানেও বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করতে পারবেন, সিটি সেন্টারেও একটি সিনেমা হল রয়েছে। সিপিএম আর কংগ্রেস এর পার্টি অফিস এই রাস্তায় ই। সিটি সেন্টারের পরেই বটতলা মোড়। মূলত এই রাস্তাটার দুপাশটাই মূল আঁগরতলা।

কি কি দেখবেন -

হেরিটেজ পার্ক, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, অন্যান্য ( প্রথম দিন ) : আঁগরতলা শহরে আপনার যেটা প্রথম দেখা উচিত বলে মনে করি তা হচ্ছে হ্যারিটেজ পার্ক। কেননা পার্কের মতো করে হলেও এইটা মূলত ত্রিপুরার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সমূহের ম্যাপ। বিভিন্ন স্থাপনার প্রতিকৃতি কিংবা পর্যটন স্পটে যাওয়ার রোড ম্যাপ এখানে মিনিয়েচার করে তৈরি করে রাখা হয়েছে। এখানে গেলেই গোটা ত্রিপুরার আপনার কোথায় কোথায় যাওয়া উচিত এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কি দেখা উচিত তার একটা পরিকল্পনা করে নিতে পারবেন।
হ্যারিটেজ পার্কে যেতে আপনার অটো ভাড়া লাগবে মটর স্ট্যান থেকে ৪০ রুপি। পার্কের প্রবেশমূল্য ৫ রুপি। পার্ক থেকে বেরিয়ে পাশেই ভ্রাম্যমান হোটেল পাবেন ( নামটা মনে নেই ) সেখান থেকে সস্তায় কিন্তু পরিচ্ছন্ন খাবারে দুপুরের খাবারটা সেরে নিতে পারেন। এখানে ৩০ রুপিতে যে বিরিয়ানি পাওয়া যায় আর বিরিয়ানিতে যে মাংসের পিস এর সংখ্যা;  আমি হলফ করে বলতে পারি আপনি আশ্চর্য না হয়েই পারেন না ! এখান থেকে খাওয়া সেরে ফেরার সময় আপনি উজ্জয়ন্ত প্রাসাদটা দেখে নেবেন, প্রায় কাছাকাছি। ফরেনার বললে ওখানে প্রবেশ মূল্য নেবে ২০০ রুপি, আর স্থানীয়র পরিচয়ে ঢুকতে পারলে মাত্র ১০ রুপি। মূল গেটের সামনে বিশাল এক ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড এ ভারতের এক বিশাল পতাকা টানানো, ঢুকতে ডান পাশে সূর্যসেন আর বামপাশে ক্ষুধিরাম এর বৃহৎ ভাস্কর্য । সন্ধ্যাটা আপনি শহরে ঘুরে ফিরে কাটিয়ে দিতে পারেন।

আগরতলা রেল স্টেশন, ঊনকোটি, চা-বাগান অন্যান্য ( ২য় দিন ) : পরের দিনের পরিকল্পনায় আপনার ঊনকুটি থাকলে সেখানে আপনি বাস কিংবা ট্রেনে যেতে পারেন। আমরা ট্রেনে গিয়েছিলাম। তবে আমি বলবো আপনি ট্রেনেই যান। কারণ ত্রিপুরার আসল সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ঊনকূটি যেমন আপনাকে দেখতে হবে তেমনি ঐ রাস্তায় যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তা ও দেখতে হবে। এই পথে আপনি ভ্রমণ না করলে ত্রিপুরার সৌন্দর্য নিয়ে আপনার নেগেটিভ সেন্স তৈরি হবে। ট্রেনে গেলে আপনি আঁগরতলা রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠবেন, আঁগরতলা স্টেশনটাও স্থাপত্য কলায় বেশ, ট্রেনে ভাড়াও অল্প।


আঁগরতলা রেল স্টেশন

আঁগরতলা স্টেশনে যেতে আপনি মটরস্ট্যান থেকে অটো কিংবা বটতলা থেকে বাস পাবেন। আঁগরতলা শহরে ৪ কিলোমিটার ব্যাবধানে দু’টো স্টেশন একটি আঁগরতলা অপরটি যোগেন্দ্রনগর। যোগেন্দ্রনগর থেকেও আপনি উঠতে পারেন, তবে যেহেতু স্টার্টিং স্টেশন আঁগরতলা সেখান থেকে উঠাই ভালো, সিট পাওয়ার দুঃশ্চিন্তা থাকে না।


আঁগরতলা থেকে ট্রেনের ভাড়ার তালিকা

আঁগরতলা থেকে যাওয়া আসার ৬ থেকে ৭ টা মেইল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন উভয়ই পাওয়া যায়। এক্সপ্রেস বা মেইল এ সময় এবং ভাড়া একটু এদিক সেদিক হবে। আমরা সকাল ৬:১৫ এর মেইল ধরেছিলাম। কারণ সকাল সকাল গেলে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা সম্ভব। আঁগরতলা থেকে ঊনকূটির দূরত্ব প্রায় ১৫০ কি.মি। ভাড়া মাত্র ২৫ রুপি।


ঊনকূটি যেতে আপনি কুমারঘাট বা ধর্মনগর যে কোনো একটি স্টেশনে নামতে পারেন।

কুমারঘাট স্টেশন

আমরা যাওয়ার সময় কুমারঘাট নেমে জিপে গিয়ে ফেরার সময় ধর্মনগর হয়ে ফিরেছিলাম। প্রতিটি স্টেশন প্লাটফরম বেশ বড়সড় আকারের। পাহাড়ি প্লাটফরমগুলিতে ট্রেন থামলে পাহাড়ে উৎপন্ন হওয়া বিভিন্ন ফলমূল সব্জী বিক্রি করতে নিয়ে আসে ভ্রাম্যমান নারী পুরুষ বিক্রেতারা। অফিস কিংবা নানা কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে যাত্রীরা কিনে নেয় তাদের এসব উৎপাদিত জিনিস। প্লাটফরমের  প্রবেশপথ কিংবা ভিতরে দেয়ালে কারুকার্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক কিংবা ঐতিহ্যময় চিত্র।
ট্রেন চলার প্রায় ১৫০ কি.মি এর এই পাহাড়ি পথে তিনটি টানেল এর ভিতর দিয়ে ট্রেন যায়। প্রতিটি টানেল তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ের ভিতর দিয়ে   প্রায় ১০ থেকে ১২ কি.মি. দৈর্ঘের সুড়ঙ্গ কেটে। ছোট এই রাজ্যটির পথ তৈরিতেই যে বাজেটের বড় একটা অংশ বহুদিন যাবৎ রাজ্যটিকে ব্যায় করতে হয়েছে তা ত্রিপুরার বাস কিংবা ট্রেন উভয় পথে চললেই অনুধাবন করা যায়, আর নিশ্চয় সেজন্য তাকে বহু প্রয়োজনীয় বাজেট কাঁটছাট করে চলতে হয়েছে অনেকটা সময় ধরে।

ধর্মনগর স্টেশনের প্রবেশ পথ

উভয় স্টেশন থেকে আপনাকে জিপ নিতে হবে। শেয়ার জিপ কিংবা রিজার্ভ এভেইলেবল। কুমারঘাট হয়ে গেলে সেখান থেকে জিপভাড়া কৈলাশহর মোড় পর্যন্ত ৪০ রুপি পড়ে, ঐ মোড় থেকে বাসে ঊনকোটি বাসভাড়া ১০ রুপি। কৈলাশহর মোড়ে বাসের জন্য আমাদের বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।

কৈলাশহর মোড়

 ধর্মনগর স্টেশন কুমারঘাট স্টেশন থেকে ৪০ মিনিটের পথ হলেও ধর্মনগর থেকে ঊনকোটি যাওয়া সহজ মনে হয়েছে। কুমারঘাট স্টেশনের বাইরেই জিপস্ট্যান্ড কিন্তু ধর্মনগর স্টেশন থেকে জিপস্ট্যান্ড অল্প দূরে, যেতে অটো ভাড়া ১০ রুপি। জিপস্ট্যান্ড থেকে ঊনকোটি পর্যন্ত জিপ ভাড়া ৪০ রুপি।

ঊনকোটি যাওয়ার উভয়পথ পুরোটাই পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা রাস্তা ধরে। উভয় পথেই আপনি সবুজ পাহাড়ি যে চা বাগান দেখতে পাবেন তার সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়ে যাবেন। রিজার্ভ জিপ নিয়ে গেলে নেমে ঘুরে দেখে যেতে পারবেন। এছাড়াও ছোট বড় নানা পাহাড়ি গাছ, আদিবাসীদের ঘরবাড়ি চোখে পড়বে। ঊনকোটিতে যে বাঁকটির কাছে বাস বা জিপ আপনাকে নামিয়ে দেবে সেখানেই একটি ইকোপার্ক রয়েছে, সেখান থেকে পাহাড়ি পথে নিচের দিকে ৫ মিনিট হাঁটলেই ঊনকোটি। এখান থেকে আপনি বাংলাদেশের প্রায় সকল মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক পাবেন। চাইলে নিজের মোবাইলেই দেশের প্রয়োজনীয় মানুষদের সাথে কথা সেরে নিতে পারেন। এটা আপনার জন্য বেশ মজার একটা অনুভূতি হতে পারে। এ অঞ্চলে খাবার দোকান-টোকান বলতে ঊনকোটির গেটের সামনে ছোট্র একটি দোকান আছে, দোকানে পানি বিস্কিট, কলা, কেক ইত্যাদি খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া পাহাড়ি  এ তল্লাটের ২০ কি.মি. এর আশপাশে অন্য কোনো দোকান-পাট নেই।



ঊনকোটির ল্যান্ডস্কেপ আপনাকে দু’য়েকটি ছবি কিংবা ভিডিওতেও বুঝানো সম্ভব নয়। এটার প্রকৃত সৌন্দর্য বুঝতে হলে আপনাকে ওখানে গিয়েই বুঝতে হবে। পাহাড়ের পাথর কেটে বিভিন্ন মূর্তির প্রতিকৃতি সহ ঝর্ণা, আর উদ্যান এর চমৎকার দৃষ্টিনন্দন স্থান এই  ঊনকোটি। এখানে গেলে গোসলের প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত। ঘুরাঘুরির পর ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ঊনকোটির ছোট্র ঝর্ণার হিমশীতল জলের স্নান আপনার সকল ক্লান্তি ঝড়িয়ে দেবে।

ঊনকোটি


ঊনকোটি পৌছার পর দিনে দিনে আঁগরতলায় ট্রেনে ফিরে আসতে চাইলে আপনার যে বিষয়টি মাথায় রাখার দরকার সেটি হচ্ছে ফেরার ট্রেনের সময়সূচী। ঊনকোটি থেকে বাসে বা জিপে ধর্মনগর স্টেশনে আসতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগে, এছাড়াও ধর্মনগর যাওয়ার জন্য বাস বা জীপের জন্য অপেক্ষা, ট্রেনে উঠার আগে দুপুরের খাবারটা ধর্মনগরের কোনো একটা হোটেলে সেরে নেয়া; সে মতে হিসেব করে ঊনকোটিতে আপনি ততক্ষণই অবস্থান করুন যতক্ষণ পরে ট্রেন ধরা যায় (ইকোপার্কের সামনে দাঁড়িয়ে জিপ বা বাসের অপেক্ষায় আমাদের বেশ খানিকটা সময় লেগেছিলো )।

ধর্মনগর রাত্রিযাপনের হোটেলও আছে। বিকালে দুইটা ট্রেন পাওয়া যায় একটা ৩ টায় অপরটা সম্ভবত এর ৩০ মিনিট পরে। আর আপনি যদি ঊনকোটি দেখে জম্পুই পাহাড় যেতে চান তাহলে  ট্রেনের শিডিউল এর প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে ধর্মনগর থেকেই আপনি জম্পুই পাহাড় যেতে পারবেন। জম্পুই পাহাড় ত্রিপুরার সর্বোচ্চ পাহাড় আর প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যের এক আঁধার। ধর্মনগর থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগে জম্পুই পাহাড়ে যেতে, কোনো ট্রেন লাইন নেই বাস ই ভরসা। জম্পুই পাহাড়ের পড়েই মিজোরাম। ধর্মনগর স্টেশন থেকে ট্রেনে সোজা লাইনে  ৫০ কিলোমিটার পর থেকেই আসাম এর অংশ শুরু। ট্রেনে পুনরায় আঁগরতলা ফিরলে সন্ধ্যা ৭ টা বেজে যাবে, আর ফেরার পথে যোগেন্দ্র নগর স্টেশনে নেমে যাওয়াই উত্তম হবে, কেননা মটরস্টেন থেকে যোগেন্দ্রনগর স্টেশন কাছে এবং যোগেন্দ্রনগর থেকে মটরস্টেন এর বাস ভাড়া মাত্র ১০ রুপি।
সারাদিন বেশ একটা ধকল যাবে, সে হিসাবে সেদিন আপনার বিশ্রাম নিতেই ভালো লাগবে। আপনি সৌখিন পর্যটক হলে আসলে একদিনে ঊনকোটি গিয়ে ফিরে আসা আপনার জন্য কষ্টকর ই হয়ে যাবে। রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়ে টিভি দেখতে পারেন। ওখানে বাংলাদেশের প্রায় সব টিভি চ্যানেল দেখতে পাওয়া যায়।

ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, কমলা সাগর, সিপাহীজলা অভয়ারণ্য, নীড়মহল ( তৃতীয় দিন ) :
সবগুলো স্থান একই পথে। সৌখিন পর্যটকদের একদিনে খুব পরিশ্রমের হয়ে যাবে। মটর স্টেন থেকে অটো নিয়ে বাস স্ট্যান্ড যাবেন। সেখান থেকে বাসে ৫ কিলোমিটারের মতো যেতেই হাতের ডান পাশে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়বে। বাসপথ হলেও এই রাস্তায় জার্নিটাও আপনি বেশ উপভোগ করবেন। টিলা উঁচু নিচু পথ পথে চা বাগান রাবার বাগান ছাড়াও মানুষের জীবনযাপন দেখতে দেখতে আপনার রাস্তাটাকে দীর্ঘ মনে হবে না। ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার যাওয়ার পর রাস্তার ডানপাশে ডানদিকে নেমে যাওয়া একটা রাস্তার উপরে একটা বড় সাইনবোর্ড পড়বে যেখানে কমলাসাগরের দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। কমলা সাগর যেতে চাইলে ওখানে নেমে যেতে হবে। মূলত কমলাসাগর বাংলাদেশের ফেনি ঘেষা একটি পাহাড়ি মন্দির। আমরা আগে সিপাহীজলা অভয়ারণ্যে গিয়ে পড়ে নীড়মহলে গিয়েছিলাম কমলা সাগর এবার যেতে পারিনি তবুও ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিলো।

আগরতলা শহর থেকে নীড়মহলের দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার আর সিপাহীজলার দূরত্ব ২৬ কিলোমিটারের মতো। অভয়ারণ্যটি উঁচু ভূমির উপরে অভয়ারণ্য থেকে আরও বেশ কয়েক মাইল আগে থেকেই শুরু হয় উঁচু উচু গাছের সারি। বনের ভিতর দিয়ে চলে গেছে মসৃন পিচঢালা পথ।


অভায়ারণ্যের বাইরের পথ
 রাস্তার পাশে ত্রিপুরার আরও একটি জিনিস দৃষ্টি আকর্ষণ করে; বিভিন্ন স্লোগান লিখা সাইনবোর্ড। কারণ ওখানকার স্লোগানগুলোর সাথে আপনি আমাদের এখানের ভাষা এবং ভাষার প্রকাশের ভিন্নতা পাবেন। প্রত্যেকটি  শ্লোগান ই যথেষ্ঠ দায়িত্বশীল এবং বিনয়ি। অবশ্য এর কৃতিত্ব আমরা বহুদিন থেকে ত্রিপুরায় ক্ষমতায় থাকা বামপন্থী সরকারকেই দিয়েছি।



সিপাহীজলার টিকিট কাউন্টার খুলে ৭:৩০ এ, শুক্রবার বন্ধ। আমরা ভোর ৬ টায় রওনা হয়েছিলাম। সময়ের আগেই পৌছে যাওয়ায় গেট তখনও খুলেনি।

অভয়ারণ্যের গেট-কাউন্টার




অভয়ারণ্যের বাইরে সারি সারি নানা জাতের বড় বড় গাছের বন। বনে শ’য়ে শ’য়ে বানর বাচ্চাসহ সারা বনময় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে দেখতে পাবেন। গেটের ভিতরেও ঢুকতেই একি চিত্র দেখতে পাবেন। টিকিট মূল্য মাত্র ১০ রুপি। গেটের বাইরেই বাম পাশটা দিয়ে একটা রাস্তা ঢুকে গেছে আমরা গেট খোলার আগ পর্যন্ত সময় কাঁটানোর জন্য ঐ পথে একটু হাঁটহাঁটির জন্য গেলেও আসলে ওপাশটা ও দেখতে মন্দ নয়। ওটা পিকনিক স্পট এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উম্মুক্ত জায়গা।



দাড়োয়ান বলেছিলো ৭:৩০ এ গেট খুলবে। আমরা ৫ মিনিট আগেই ওপাশটা থেকে ঘুরে চলে আসলাম এবং ঘটনার সাথে পরিচিতি না হওয়ার কারণে আমরা একটু অবাক ই হলাম কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আদিবাসী মহিলাটি তার ইউনিফর্ম পড়ে এক মিনিট আগে কিংবা এক মিনিট পড়েও কাউন্টারে আসলেন না, একেবারে ঠিক সময়ে টিকিট দিলেন। প্রবেশ করতেই রাস্তায় ঝাঁকে ঝাঁকে বানর পালের ঝাপাঝাপি দৌড়াদৌড়ি এর নৈস্বর্গিক চিত্র আপনার চোখে পড়বে।


প্রবেশ ফটক থেকে আপনি যদি হাঁটতে হাঁটতে যান, কষ্টকর হলেও ( আমরা হেঁটেই গিয়েছিলাম ) আপনি নানা প্রজাতির কাঠ,ফল -ফুল এর গাছ গাছরা রাবার বাগান, ঝড়াফুলে আবৃত হলুদ-সাদা হয়ে থাকা পথ, নির্জন বনে বিভিন্ন পাখ-পাখালীর ডাকের এক মোহগ্রস্থ পরিবেশের মধ্য দিয়ে ঘন্টাখানেক হাঁটবেন যা আপনাকে অভিভূত করে রাখবে। তবে নাস্তা না সেরে হেঁটে গেলে অবশ্যই হালকা খাবার এবং পানি সাথে থাকা আবশ্যক, মাঝপথে যদিও বনবিভাগের খাওয়ার পানির ব্যাবস্থা আছে ।

রাবার সংগ্রহ

 প্রবেশ ফটক থেকে শেষ প্রান্তের চিড়িয়াখানার দূরত্ব প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার, ওখানে একটা খাওয়ার কেন্টিনও আছে। পুরো পথটা কখনও উঁচু কখনও নিচু আঁকা-বাঁকা ছবির মতন। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ছাড়াও রাবার বাগান ওখানের একটি বিশেষ আকর্ষণ। রাবার গাছগুলো থেকে রাবার সংগ্রহের চিত্রও আপনার চলার পথের পাশেই পড়বে।



এছাড়াও মাঝে মাঝে- ‘ বিরল প্রজাতির মেঘলা চিতা সচরাচর অভয়ারণ্যের এই অংশে দেখা যায় ’ এমন লিখা সাইনবোর্ড দেখে নির্জন বনে নির্জনতাটা, গা ছম ছম ভাবটা আরেকটু যেনো বেড়ে যেতে পারে আপনার।


চাইলে গেট থেকে অটো বা সি. এন. জি নিয়েও যেতে পারেন, ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা। আমরা ফেরার পথে অটো করে ফিরেছিলাম। অটো না থাকলেও কেন্টিনের মালিকের কাছে অটো চালকের ফোন নাম্বার পাবেন, তাকে বললেই ফোন করে ব্যাবস্থা করে দেবে।

চিড়িয়াখানায় প্রবেশপথ একটিই, বাহিরের ক্ষেত্রে প্রবেশ গেট ছাড়াও আরো একটি গেট আছে। ১০ রুপির টিকিট কেটে চিড়িয়া খানায় প্রবেশ করলে আপনার টাকা ওসুল হয়ে যাবে। কারণ চিড়িয়াখানাটা যথেষ্ট সমৃদ্ধই বলা চলে। এখানে নানা প্রজাতির হরিণ, বানর, হনুমান, ভাল্লুক, বাঘ, সিংহ, উল্লুক, কুমির, অজগর, সজারু, ধনেশ সহ নানা প্রজাতির পশু পাখির সমাহার। বিরল প্রজাতির চশমা বানর এই অভয়ারণ্যে দেখতে পাওয়া যায় । প্রায় সবসময় নির্জন এই উদ্যানে উল্লুকের গগণ বিদারী চিৎকার পুরো চিড়িয়াখানা জুড়ে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করে রাখে।



অভয়ারণ্যের ভিতরে একটি কটেজ রয়েছে। এখানে চাইলে আপনি রাত্রিযাপন করতে পারেন। আমরা ভেবেছি আর একবার গেলে এখানে একরাত কাটাবো। সেক্ষেত্রে যাওয়ার পথে প্রথমেই সিপাহীজলা উদ্যানে না নেমে সরাসরি নীড়মহল গিয়ে নীড়মহল দেখে ফেরার পথে সিপাহীজলা অভয়ারণ্যে প্রবেশ বুদ্বিমানের কাজ হবে।

কটেজ রোড

দুপুর বেলায় অভারণ্যে প্রবেশও করা যাবে, গেট খোলার অপেক্ষাও করতে হবে না, পুরো সময়টাই কাজে লাগানো যাবে; সময় কোথায় সময় নষ্ট করার, হা হা ! আর না থাকতে চাইলেও দুপুরে অভয়ারণ্যটা দেখে অনায়াসে কমলাসাগর চলে যাওয়া যাবে। এভাবে পরিকল্পনা করলে আমাদের কমলাসাগরেও যাওয়া হতো।
যাহোক, অভয়ারণ্য দেখে বেরিয়ে আমরা গেটের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে জিপে উঠলাম নীড়মহল যাওয়ার জন্য। শেয়ার জীপ ভাড়া ৪০ টাকা জনপ্রতি। জিপে উঠার পর দেখলাম গেটের পাশেই বাইরে ডানপাশে নৌকায় ঘুরারও সুযোগ আছে।

নীড় মহল : নীড় মহল মেলাঘরের রুদ্রসাগর লেকে ১৯৩০ সালে তৈরি একটি ভবন। সিপাহীজলা থেকে এর দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। মেলাঘর বাজারে নেমে ১০ টাকায় অটো দিয়ে আপনি এই লেকের কাছে পৌছতে পারবেন। ১০ টাকা ভাড়া হলেও দূরত্ব আধা কিলোমিটারের বেশি হবে না, চাইলে হেঁটেও যেতে পারেন।
ত্রিপুরার অটো বা বাস ভাড়া ভারতের অন্য রাজ্যের থেকে আমাদের একটু বেশিই মনে হয়েছে। সিপাহীজলা থেকে নীড় মহল যাওয়ার রাস্তাটিও  বেশ মনোরম। বন, টিলা, রাবার বাগানের ভিতর দিয়ে রাস্তা ধরে গাড়ি চলার মূহুর্তটি আপনার একেবারেই দীর্ঘ মনে হবে না। অভয়ারণ্যের ভিতরে আপনি রাবার বাগান দেখে উৎফুল্ল হবার পর যখন মেলাঘর এর পথের রাবার বাগান দেখবেন তখন অভয়ারণ্যের রাবার বাগান নিয়ে আপনার উৎফুল্লতা নিমেষেই উবে যাবে। কেননা, এই রাস্তায় মাইলকে মাইল রাবার বাগানের মাঝখান দিয়ে আপনার গাড়ি ছুটবে , তবু যেনো রাবার বাগানের শেষ হতে চাইবে না। এত পরিমাণ রাবার বাগান দেখে অনুধাবন করা কষ্ট হয় না যে- ছোট রাজ্যটির আয়ের উৎস হিসাবে রাবার এর ভূমিকা নেহাত কম নয়। এছাড়াও রাস্তায় বিভিন্ন জনপদ ছাড়াও পড়বে আদিবাসী বাজার। যেখানে বিক্রেতা মূলত আদিবাসী নারীরা। বিভিন্ন পাহাড়ি সব্জীর পসরা নিয়ে বসেন তারা।



লেকের কাছেই পৌছতেই ওপারের নীড় মহল দেখা যায়। এপাড়ে দু’য়েকটা খাওয়ার হোটেল, কারুপণ্যের ছোট দোকান, ফল বিক্রেতা এমন ছোট ছোট দুয়েকটা ভ্রাম্যমান দোকান ছাড়া আর কোনো দোকান পাট নেই। এখানে পৌছে ছোট হোটেলটা থেকে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম।

নীড় মহল
লেক এর এই পাড় থেকে ঐ পাড়ে যেতে ৫ মিনিটের বেশি না লাগলেও কাউন্টার থেকে নৌকার ভাড়া বাবদ টিকিট কাটতে হবে ৩০ রুপি দিয়ে, অবশ্য আসা যাওয়া বাবদ এছাড়াও ওপারে পৌছে গেটে প্রবেশ ফি বাবদ ১০ রুপি। ডি.এস.এল.আর নিয়ে প্রবেশ করলে তার চার্জ আলাদা ১০ রুপি। মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলাতে কোনো সমস্যা নাই, এটা একটু উদ্ভট ঠেকে বৈকি।


নীড় মহল টিকিট কাউন্টার
এই লেক থেকে নৌকা মহলের ভিতরে সিঁড়ির কাছে গিয়ে থামতো এমন একটি প্রবেশপথ সহ মহলের ভিতরে একটি ঘাট রয়েছে। এইটি হিন্দু ও মোঘল সংস্কৃতি মিশ্রিত ত্রিপুরা রাজার একটি প্রাসাদ, এখানে থাকার ঘর, মঞ্চ, নিরাপত্তা রক্ষীদের থাকার ঘর ইত্যাদি ছাড়াও ভিতরে একটি বাগান রয়েছে।

নীড় মহল দেখে নৌকায় ফিরে এপার থেকে অটো নিয়ে মেলাঘর বাসস্ট্যান্ড এ এসে সেখান থেকে বাস বা জিপে চড়ে পুনরায় সরাসরি আপনি আঁগরতলা চলে আসতে পারেন অথবা এখান থেকে ত্রিপুরার আগের রাজধানী উদয়পুর অল্প দূরে সেখানেও যেতে পারেন।
বাকী বেলাটা উদয়পুর ঘুরাফেরা করে উদয়পুর থেকে একটা ট্রেন সন্ধ্যা ৮ টায় পাওয়া যায়, সেই ট্রেন ধরেও আঁগরতলায় ফিরতে পারেন অথবা নীড়মহলের এ পাড়ে লেকের কাছেই থাকার হোটেল আছে সেখানেও রাত্রী যাপন করতে পারেন যেহেতু এটা আমাদের ৫ দিনের ট্যুর ছিলো তাই এইবার আমরা উদয়পুরটা যাওয়া হয় নি।

চতুর্থ দিন : আপনি আরো বেশি সময় নিয়ে গেলে ঐ দিন উদয়পুরে থেকে গিয়ে পরের দিন উদয়পুর থেকে অমরপুর এর ছবিমুড়া ঘুরে আসতে পারেন ওখানে পাহাড়ের গাঁয়ে ঊনকুটির মতো পাহাড় কেটে বিভিন্ন মূর্তির প্রতিকৃতি তৈরি করা আছে কিংবা উদয়পুর থেকে বিলুনিয়ার তৃষ্ণা অভয়ারণ্য আর পিলাক দেখে আসতে পারেন। উদয়পুর থেকে ছবি মুড়া’র দূরত্ব ৫০ কি.মি এর মতো, আর তৃষ্ণা অভয়ারণ্যের দূরত্বও ৫০ কি.মি এর মতো। আর তৃষ্ণা অভয়ারণ্য থেকে পিলাক এর দূরত্ব ২০ কি.মি এর মতো।
আর আঁগরতলায় ফিরে আসলে একটা দিন শহরে এলোপাথাড়ি ঘুরাঘুরি, সিনেমা দেখা, আপনার কিছু কেনাকাটা থাকলে সেটা সেরে নেয়া ইত্যাদি করতে পারেন। আর পঞ্চম দিন বাড়ি ফেরা।

সাবধানতা : অাপনি অবশ্যই ডলার এক্সচেঞ্জ করে রিসিভ কাগজটা নিয়ে নেবেন, আর কেনাকাটা করার পর যে রিসিভ ফর্দগুলো আপনাকে দেয়া হবে তা ও, অন্যথায় এসব নিয়ে আপনাকে ফেরার পথে আরেক দফা হেনস্থার শিকার হওয়া লাগতে পারে। ফেরার পথে বাংলাদেশ অংশে বিডিআর আপনার ব্যাগ চেক করবে এ্যালকোহল জাতীয় কিছু আছে কি না ! কিংবা কি কি আনলেন সে বিষয়ে দু’য়েকটা কথা আর ব্যাগ খুলে অল্প হাতাহাহি করবে। আর বাংলাদেশের লাগেজ চেক অফিসে চেক না করেই আপনার কাছে ১০০ টাকা চাইবে। এসব শেষে পুনরায় রিক্সা বা সি. এন. জি তে আখাউড়া। আমাদের ট্রেনের টিকিট কাটা ছিলো ১১.৩০ টায় বিজয় ধরে আমরা ৪ টার মধ্যে ময়মনসিংহ পৌছে গিয়েছিলাম। কেনাকাটা ছাড়া আর পাসপোর্ট ভিসা ফি ছাড়া আপনার ৫ দিনের ত্রিপুরা ভ্রমণ ৭০০০ টাকার মধ্যেই সারা সম্ভব।

বি:দ্র: - ব্লগে ব্যাবহৃত সকল ছবি লেখকের। কতক মোবাইল ক্যামেরা আর কতক ডিজিটাল সিঙ্গেল রিফ্লেক্স ক্যামেরায় তোলা।  এই সব ছবি কিংবা লিখা বিনা অনুমতিতে কেহ নিজের বলে চালিয়ে দিলেও লেখকের কোনো আপত্তি নাই। ধন্যবাদ।

সোনাদিয়া : আ ডিজার্টেড আইল্যান্ড

 সময়কাল ২০২৪।  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর জনাকীর্ন তিনটি পয়েন্ট ডলফিন মোড় থেকে শুরু। প্রথমটি কলাতলী শেষেরটি লাবণী আর মাঝের পয়েন্টটির নাম সুগন্...